ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, অরিত্রিক ভট্টাচার্য ও কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা : করোনার বাড়াবাড়ি রুখতে রাজ্যে এখনও বন্ধ লোকাল ট্রেন। চালানো হচ্ছে শুধুমাত্র স্টাফ স্পেশাল ট্রেন। সেই স্টাফ স্পেশালে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্তদের ছাড়া সাধারণ মানুষের ওঠা নিষেধ। কিন্তু, বাস্তব ছবিটা একেবারেই ভিন্ন। স্টাফ স্পেশাল ট্রেনে উঠছেন সাধারণ মানুষও। তৃতীয় ঢেউয়ের ভ্রুকুটির মধ্যে স্টাফ স্পেশাল ট্রেনে ভিড় দেখে শঙ্কিত চিকিৎসকরা। চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার বলছিলেন, 'ইন্টার জোনাল পরিবহণ চালু করার মতো পরিস্থিতি তৈরি না হওয়াতেই ট্রেন চালায়নি। যে কোনও লোক উঠছেন, একটা ফিল্টার রাখা উচিত, না হলে হিতে বিরপীত হবে।'


বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে দৃশ্যটা হওয়া উচিত ছিল ফাঁকা ফাঁকা ট্রেনে শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে যাত্রীদের যাতায়াত, কিন্তু বাস্তব ছবি একেবারেই উল্টোটা। স্টাফ স্পেশাল ট্রেনে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্তদের ছাড়া সাধারণ মানুষের ওঠা নিষেধ হলেও সেই ট্রেনেই উঠে পড়ছেন নিত্যযাত্রীরাও। তার জেরে, ভিড় উপচে পড়ছে বিভিন্ন স্টাফ স্পেশালে। উত্তর শহরতলির বারাসত হোক বা দক্ষিণের সোনারপুর, একই ছবি সব জায়গায়। ট্রেনে তিল ধারনের জায়গা নেই, তার মধ্যেই হুড়মুড়িয়ে ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করছেন প্ল্যাটফর্মে থাকা মানুষজন। আবার যাত্রীদের অনেকের মুখেই নেই মাস্কও। গোটা পরিস্থিতির জেরে রেলকর্মীরা আতঙ্কে রয়েছেন, ট্রেনে লাগামছাড়া ভিড়ের জেরে সংক্রমণের ভয় পাচ্ছেন তারা। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী যে কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, 'এই পরিস্থিতি আতঙ্কে রেলকর্মীরা, তাঁরা সংক্রমণের ভয় পাচ্ছেন।'


রেলযাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, শিয়ালদা স্টেশন যে ছবি দেখা যাচ্ছে, আসলে ছবিটা সেরকম নয়। বিভিন্ন স্টাফ স্পেশাল ট্রেনে ভিড় হচ্ছে অনেক বেশি। কারণ, শিয়ালদা প্রান্তিক স্টেশন হওয়ায় সেখানে নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে, জরিমানার ভয়ে অনেকেই আগের অরক্ষিত স্টেশনগুলিতে নেমে যাচ্ছেন বা সেখান থেকেই ট্রেনে উঠছেন। করোনাকালে ভিড়ে ঠাসা ট্রেনের বগিতে সংক্রমণের আশঙ্কা সঙ্গী করে ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত তাহলে কেন? জানতে চাইলে ট্রেনযাত্রীদের কেউ বলছেন, 'সামান্য টাকা রোজগার করি, বাসের যা ভাড়া, খাব কী?' আবার কেউ বলছেন, 'এই ভিড়, মুখে মাস্ক রাখা যাচ্ছে না। সংক্রমণ ছড়াবে তো। ট্রেন চালু করা উচিত।'


লোকাল ট্রেন কবে থেকে রাজ্যে চালু হবে তা নিয়ে অবশ্য কোনও ইঙ্গিত রাজ্য সরকারের তরফে এখনও নেই। তবে দ্বিতীয় ঢেউ শেষ হতে না হতেই, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের ভ্রুকুটি রাজ্যজুড়ে। এই পরিস্থিতিতে মানুষ সতর্ক না হলে, পরিস্থিতি মারাত্মক হতে পারে বলে বারবার সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।