কলকাতা: আগামী বছরের পঞ্চায়েত ভোটের দিকে তাকিয়ে দরাজহস্ত রাজ্য। ৫০০ টাকা করে বাড়ছে আশা, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী-সহায়কদের ভাতা। কৃষকদের জন্য ১০০ কোটির বিশেষ তহবিল।
২০১৪-র লোকসভা নির্বাচন হোক, কিংবা ২০১৬-র বিধানসভা-- যে গ্রাম দু’হাত ভরে ভোট দিয়েছে তৃণমূলকে, এবারের বাজেটেও সেই গ্রাম ও গ্রামীণ মানুষের জন্য একগুচ্ছ ঘোষণা করা হল। লক্ষ্য সামনের বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই গ্রামীণ ভোটব্যাঙ্ক অটুট রাখা।
এবারের বাজেটে ‘আশা’ কর্মীদের ভাতা পাঁচশো টাকা বাড়ানো হয়েছে। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়কদের ভাতাও বাড়ানো হয়েছে পাঁচশো টাকা করে। কৃষি দফতরের জন্য এক হাজার নশো সত্তর কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
নোট বাতিলের প্রতিবাদে শুরু থেকেই সরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি দাবি করছে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে এই প্রতিবাদ। এই প্রেক্ষাপটেই কাজ ও কথার মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার চেষ্টাও লক্ষ্য করা গিয়েছে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূল সরকারের প্রথম বাজেটে। নোট বাতিলের ফলে ভিন রাজ্য থেকে কাজ হারিয়ে ফেরা শ্রমিকদের কথা আগে বারবার বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেই কথা মাথায় রেখে এবারের বাজেটে নোটবাতিলের জেরে যারা কাজ হারিয়ে ভিন রাজ্য থেকে ফিরে এসেছেন, তাদের এককালীন পঞ্চাশ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্যের ঘোষণাও করা হয়েছে বাজেটে। এছাড়াও নোট বাতিলের জেরে কৃষি সমবায় ঋণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এরজন্য একশো কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গড়া হয়েছে। রাজ্যে বড় শিল্পের যখন আকাল, তখন ছোট ও মাঝারি শিল্পের পক্ষে অতীতে বারবার সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে।
এবারের বাজেটে বলা হয়েছে, যে ব্যবসায়ীদের বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত, তাদের পুরো ভ্যাট দিতে হয় না। এবার থেকে ছোট ও নাঝারি উৎপাদনমূলক ব্যবসায়ীরাও এই ছাড়ের সুযোগ পাবেন।
কিন্তু, প্রত্যাশিত পথে হেঁটেই বাজেটের মধ্যে আশাব্যাঞ্জন কিছু দেখছে না বিরোধীরা। বামফ্রন্ট পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ধাপ্পাবাজির বাজেট, সর্বনাশের বাজেট। বিজেপির গলায় কটাক্ষের সুর। দলীয় বিধায়ক দিলীপ ঘোষ জানান, মোদীর টাকায় দিদির বাজেট। বাম ও কংগ্রেসের অনুপস্থিতিতেই এদিন বাজেট পেশ করেন অমিত মিত্র।
এদিকে, বিধানসভার ভিতরে যখন রাজ্য সরকারের বাজেট পেশ হচ্ছে, তখনই বিধানসভার বাইরে 'বিকল্প বাজেট' পেশ করে বিরোধীরা। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানকে হেনস্থার অভিযোগে শুক্রবার একযোগে বাজেট বয়কট করে বাম-কংগ্রেস। বদলে বিধানসভার গাড়িবারান্দার কাছে তারা প্রতীকী অধিবেশন বসায়।
অমিত মিত্র রাজ্য বাজেট পেশের পর দুপুর আড়াইটে নাগাদ বাইরে শুরু হয় নকল বাজেট পেশ। অর্থমন্ত্রীর ভূমিকায় কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা। নকল অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায় সিপিএম বিধায়ক জাহানারা খান, স্পিকারের ভূমিকায় বিশ্বনাথ চৌধুরী। বিরোধীদের এই প্রতীকী অধিবেশন এবং নকল বাজেটের গোটাটাই ছিল সরকারের উদ্দেশে তীব্র শ্লেষে ভরা। বিরোধীদের প্রতিবাদের এই ভাষাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি শাসক দল। বিধানসভার গাড়িবারান্দায় প্রায় ঘণ্টাখানেক চলে এই প্রতীকী বাজেট অধিবেশন।