কলকাতা: কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর। আজ, বুধবারই সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সে ক্ষেত্রে জুলাই মাস থেকেই বেতন বাড়বে ৪৭ লক্ষ কর্মচারীর। পেনশন বাড়বে ৫৩ লক্ষ অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর।


কেন্দ্রের কর্মচারীরা যখন বাড়তি বেতনের হিসাব কষছেন, তখন রাজ্যের কর্মীরা সেই তিমিরেই। রাজ্যে বকেয়া মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) পরিমাণ হাফ সেঞ্চুরি ছুঁয়ে ফেললেও সে ব্যাপারে উচ্চবাচ্য নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের। মঙ্গলবার বিধানসভায় ডিএ নিয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চেয়েছিলেন বিরোধীরা। কিন্তু সন্তর্পণে সেই প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। বাজেট নিয়ে জবাবি বক্তৃতায় ডিএ-র ব্যাপারে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি তিনি।

এ দিন বিধানসভায় ডিএ-প্রসঙ্গ তোলেন বাম দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের সময়ে (বাম আমল) ৬-৭% ডিএ বাকি থাকত। এখনকার মতো ৫০% বা তার কাছাকাছি বকেয়া থাকত না। রাজ্যের কর্মচারীদের বঞ্চিত করে ১৫ হাজার কোটি টাকা বাঁচানো হচ্ছে।’’ একই সুরে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারি কর্মীরা ডিএ-র উপর নির্ভরশীল। অথচ, বকেয়া ডিএ দিলেন না অর্থমন্ত্রী!’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘রাজ্যে ৬০ হাজার শিক্ষক পদ শূন্য। সেখানে মাইনে দিতে হচ্ছে না। সেই টাকাটা সঞ্চয় হচ্ছে। অন্তত ডিএ-টা দিন।’’

বিরোধীদের মুখে ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার দাবি শুনে বিধানসভার কর্মীরা খানিকটা উৎসাহিত হয়েছিলেন। জবাবি ভাষণে অর্থমন্ত্রী কোনও ঘোষণা করেন কি না— তা নিয়ে কৌতূহলও ছড়িয়েছিল। কিন্তু অর্থমন্ত্রী কোনও আশার কথা না-শোনানোয় দিনের শেষে হতাশা চেপে রাখেননি তাঁদের অনেকেই। হতাশ কর্মীদের বক্তব্য, এত দিন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ৫০ শতাংশ ডিএ বেশি পাচ্ছিলেন। এ বার বেতন কমিশনের সুপারিশমতো তাঁদের মূল বেতন ১৪.২৭ শতাংশ বৃদ্ধি হলে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে বেতনের ফারাক আরও বহু গুণ বেড়ে যাবে।

কেন্দ্র বেতন কমিশন গড়ার পরে রাজ্যেও অর্থনীতির শিক্ষক অভিরূপ সরকারকে চেয়ারম্যান করে ষষ্ঠ বেতন কমিশন গঠিত হয়েছে। কমিশন গঠিত হয়ে গিয়েছে এই যুক্তিতে মহার্ঘ ভাতার দাবি সরকার আর মানবে না বলেই মনে করেন প্রশাসনের অনেকে। কিন্তু রাজ্যের বেতন কমিশন কবে তার প্রস্তাব জমা দেবে, কবে সেই প্রস্তাব কার্যকর হবে— তা নিয়ে বাজেটে কিছুই বলেননি অমিতবাবু। উল্টে বেতন ও পেনশন খাতে তিনি যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ করেছেন, তা থেকে এটা স্পষ্ট যে, চলতি আর্থিক বছরে বেতন কমিশনের সুপারিশ এলেও তা কার্যকর করার সম্ভাবনা প্রায় নেই।

অর্থমন্ত্রী এ দিন বলেন,‘‘বেতন কমিশন আগে সুপারিশ করুক, তার পর সরকার ভাববে। কমিশন যেমন বলবে, সরকার তেমনই সিদ্ধান্ত নেবে।’’ অর্থ দফতরের এক কর্তা এ দিন জানান, এ পর্যন্ত দু’দফায় কমিশনের মেয়াদ বাড়লেও এখনও পুরোদমে তার কাজ শুরু হয়নি।
ফলে এ বছরের মধ্যে কমিশন রিপোর্ট জমা দেবে— এমন সম্ভাবনা কম। সেই কারণেই বাজেটে বাড়তি বরাদ্দ রাখা হয়নি।

ডিএ বা বেতন কমিশনে আশার আলো দেখা না-গেলেও দ্বিতীয় দফায় জয়ের পর নবান্নে এসেই বেতনের ১০% অন্তর্বর্তিকালীন সুবিধা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পে-ব্যান্ডের উপর বর্ধিত সেই টাকা কর্মচারীরা পাবেন জুলাই মাস থেকে। কিন্তু মূল বেতনের বদলে পে-ব্যান্ডের উপর অন্তর্বর্তিকালীন এই সুবিধা দেওয়ায় তাঁরা খুশি নন।

সারা দেশে বকেয়া ডিএ-র নিরিখে পশ্চিমবঙ্গই সবচেয়ে পিছিয়ে। তার পরেই রয়েছে ত্রিপুরা। তাদের বকেয়া ৩০ শতাংশ। কিন্তু ওই রাজ্যের হাইকোর্ট সম্প্রতি রাজ্য সরকারকে বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘অর্থমন্ত্রীর যুক্তি অনুযায়ী আমাদের রাজ্য ঋণে জর্জরিত। সে জন্য ডিএ দেওয়া যাচ্ছে না। অথচ কেরল বা পঞ্জাবের মতো রাজ্য, যাদের ঋণের পরিমাণ পশ্চিমবঙ্গের সমতুল, সেখানে কিন্তু ৬%-র বেশি ডিএ বকেয়া নেই।’’