কলকাতা: রাতে বৃষ্টি থামলেও দিনভর জমা-জলের দুর্ভোগ কাটল না কলকাতার। উত্তর থেকে দক্ষিণ-- বহু জায়গাতেই একই ছবি। জলের নীচে মুখ লুকলো শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। রুদ্ধ হল যানের গতি। জল ঢুকল বাড়িতে। জল-যন্ত্রণায় নাজেহাল মানুষ। জল-যন্ত্রণার কবলে জেলাও।
১২৯ নম্বর ওয়ার্ডে বেহালার জাগরণী এলাকার ছবিটা ভয়াবহ। কোথাও কোমর সমান জল, কোথাও হাঁটু পর্যন্ত। একই ছবি রবীন্দ্রনগর এলাকায়। পুরসভার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে স্থানীয়দের একাংশ। ১১১ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রহ্মপুরের নিভা পার্ক এলাকায় রাস্তা জলের তলায়।
লেক গার্ডেন্স-সহ দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় জমা জলের জেরে ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। যাদবপুর, বাঁশদ্রোণী, তিলজলা, কসবার বিভিন্ন জায়গায় জল জমে রয়েছে। জলমগ্ন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সংলগ্ন হসপিটাল রোড।
উত্তর কলকাতার জল-ছবিটাও একইরকম। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, মহাত্মা গাঁধী রোড, আর্মহার্স্ট স্ট্রিট, রবীন্দ্র সরণি, বিধান সরণি, কলেজ স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া-সহ একাধিক এলাকা জলে থই-থই। জলে ডুবে রয়েছে পাতিপুকুর, দমদম, উল্টোডাঙা আন্ডারপাস।
জলের সঙ্গে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে ভেঙে পড়া গাছ। এর জেরে এদিন গড়িয়াহাট-সহ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। গতকাল গাছ উপড়ে পড়ে লেক মার্কেট, শরৎ বোস রোড, হরিশ মুখার্জি রোড-সহ বিভিন্ন এলাকায়।
শুধু শহর নয়, জেলাতেও চলেছে দুর্ভোগ। কোথাও গৃহবন্দি গৃহস্থ, তো কোথাও জল থইথই হাসপাতাল। বৃষ্টির জেরে বিপর্যস্ত সড়ক যোগাযোগ। নাজেহাল রেল যাত্রীরা। হাওড়া পুরসভার ৬৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৫টিই জলের তলায়। জল ঢুকে গিয়েছে বাড়ির রান্নাঘরেও। ঘুসুড়ির সত্যবালা আইডি হাসপাতাল এবং টি এল জয়সবাল হাসপাতালেও জল যন্ত্রণার চেনা ছবি।



রেল লাইনে জল জমে যাওয়ায়, হাওড়ায় পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের পরিষেবা বিপর্যস্ত। হাওড়ার পরিবর্তের সমস্ত দূরপাল্লার ট্রেন ছাড়বে সাঁতরাগাছি থেকে। পাম্প দিয়ে লাইনের জমা জল সরানোর চেষ্টা করছে রেল। বাতিল করা হয়েছে, একাধিক ট্রেন। সময় পরিবর্তিত হয়েছে বহু ট্রেনের।
হাওড়ায় ঢুকতে না পারায় বিভিন্ন স্টেশনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে একাধিক দূরপাল্লার ট্রেন। বাধ্য হয়ে ট্রেন থেকে নেমে সড়ক পথে গন্তব্যে রওনা দেন অনেকে। জল-যন্ত্রণা দুর্গাপুরেও। দুর্গাপুর পুরসভার মেন গেট, তামলা, কাদা রোড, পুরনো কোর্ট, বেনাচিতি, ভিরিঙ্গি, সগরভাঙা, রাতুরিয়া-অঙ্গদপুর -সহ বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন। পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে, মানছেন পুর কর্তারা।
লাউদোহার গৌরবাজার, জগন্নাথপুরে বহু বাড়ি জলের তলায়। বেশ কয়েকটি বাড়ি ভেঙে গিয়েছে।
জামুড়িয়ার বীজপুরে ভেঙে পড়েছে একাধিক বাড়। রানিগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায়। আসানসোলে রেলপাড়ের গাড়ুই নদীর তীরবর্তী এলাকায় কয়েকশো বাড়ি জলমগ্ন। একই ছবি কুলটিতে। নিয়ামতপুরেরও জল যন্ত্রণায় সাধারণ মানুষ।
একই ছবি বাঁকুড়াতেও। কংসাবতী জলাধার থেকে এদিন ফের জল ছাড়ায় বন্ধ রানিবাঁধ-খাতরা সড়ক যোগাযোগ। কেচন্দা সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করার দাবি করেছেন স্থানীয়রা। ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন। নদী তীরবর্তী এলাকায় প্লাবনের আশঙ্কা দেখা গিয়েছে।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আগামী ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত হবে। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে, উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়ায়। ভারী বৃষ্টি হবে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি এবং বর্ধমানে।