শান্তনু নস্কর, সুন্দরবন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ক্ষত সেরে ওঠার আগেই নিম্নচাপের বৃষ্টিতে ফের জলমগ্ন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা। চাষের জমি থেকে মাছের ভেড়ি, ভারী বর্ষণে ভেসে গিয়েছে অনেক কিছু। মহামারী পরিস্থিতির মধ্যে রুটিরুজি হারিয়ে আবার কঠিন জীবনযুদ্ধের মুখোমুখি বিশ্বের বৃহত্তম মোহনাবনের বাসিন্দারা।
আমফানের গভীর ক্ষত কাটিয়ে ওঠার আগেই জোর ঝাপটা দিয়েছে ইয়াস। আর ইয়াসের ক্ষত দগদগে থাকতেই নতুন বিপদ খাড়া করল নিম্নচাপের ভারী বৃষ্টি। জীবনযুদ্ধে আবার কঠিন লড়াইয়ের সামনে দাঁড়াতে হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনবাসীদের। ছোট মোল্লাখালির বাসিন্দা মলয় মিস্ত্রির কথায়, চারদিকে ডুবে গিয়েছে। ইয়াসে নদীবাঁধ ভেঙে যা ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হল এই বৃষ্টিতে। সব ফসল নষ্ট। মাছের ভেড়ি ভেসে গিয়েছে।
যেদিকে চোখ যায়, শুধু জল আর জল। গোসাবা, বাসন্তী থেকে ক্যানিং সর্বত্র একই ছবি। বহু বাড়িতে জল ঢুকেছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, ভেঙেছে বেশ কিছু বাড়ি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রায় আশি শতাংশ সুন্দরবনবাসী কৃষি ও মাছচাষের ওপর নির্ভরশীল। কলকাতার পাইকারি বাজারে সবজি, মাছ পাঠিয়ে তাঁদের নিত্যদিনের উপার্জন। সেখানেই ঘা দিয়েছে লাগাতার বৃষ্টি।
২১ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেছিলেন গোসাবার বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ সাউ। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে কার্যত সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি জানিয়েছেন, প্রায় ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। ছোট মোল্লাখালি, কুমিরমারীর মতো এলাকায় ভেসে গিয়েছে পুকুর, খাল, বিল, এমনকি মাছের ভেড়িও। তার জেরে বড় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন মৎস্যজীবীরা। ছোট মোল্লাখালির আরেক বাসিন্দা হিমাংশু বাউলিয়ার কথায়, কঠিন পরিস্থিতি। সরকার পাশে না দাঁড়ালে আমাদের পক্ষে সংসার চালানো মুশকিল।
তবে দুর্যোগের মেঘ এখনও কাটেনি। মঙ্গল ও বুধবার দুই ২৪ পরগনায় বৃষ্টি বাড়ার পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া দফতর। আর তাতেই শঙ্কার নতুন মেঘ ঘনীভূত হয়েছে সুন্দরবনে। ছোট মোল্লাখালি গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান সুষমা কর্মকার বলেন, প্রবল বর্ষণে ক্ষতি হয়েছে। বেশ কিছু বাড়ি ভেঙেছে। মানুষ কষ্টে রয়েছেন। পঞ্চায়েতের তরফ থেকে যতটা সাহায্য করা যায় করব।