পুরুলিয়া: ক্রমাগত দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় এবার পুরুলিয়া তৃণমূল জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক গৌতম রায়কে বহিষ্কার করল পুরুলিয়া জেলা নেতৃত্ব। সম্প্রতি শুভেন্দুর ঘনিষ্ট হিসেবে জেলায় ‘দাদার অনুগামী’ সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন গৌতম। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারনেই এমন সিদ্ধান্ত তৃণমূলের।


দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত শুনে গৌতমের প্রতিক্রিয়া, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন থেকে দিদি না হয়ে পিসিমা হয়েছেন, সেদিন থেকে দল ধংস হতে শুরু করেছে। তৃণমুল এখন গরু চোর, কয়লা চোর, সোনাচোরদের দল। তৃণমুলের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ মানে পাপ থেকে মুক্তি।’

শীর্ষনেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন বিধায়ক মিহির গোস্বামী। মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁকে নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। বেসুরো বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক শীলভদ্র দত্তও। আজ মুকুল রায়ের সল্টলেকের বাড়িতে যান শীলভদ্র। তিনি আর বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

এরই মধ্যে পূর্ব বর্ধমানের তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডলের সমর্থনে পোস্টার দুর্গাপুরে। পোস্টারে লেখা ‘শুভেন্দুর সঙ্গে দেখতে চাই’। দলের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। জল্পনা উস্কে দিয়ে মন্তব্য সুনীল মণ্ডলের। ফ্লেক্স-পোস্টার ছড়াচ্ছে বিজেপি। দাবি তৃণমূলের একাংশের। মানতে নারাজ গেরুয়া শিবির।

আজ পশ্চিম বর্ধমানে দুর্গাপুরের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায়, দেখা গেল পূর্ব বর্ধমানের তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডলের সমর্থনে ফ্লেক্স। সেখানে তাঁর সঙ্গে রয়েছে শুভেন্দুর ছবিও। আর নীচে লেখা, ‘সুনীলদা, আমরা শুভেন্দুদার সঙ্গে তোমাকেও চাই।’ এই ফ্লেক্স ছড়িয়ে পড়ার পর স্বাভাবিকভাবেই জল্পনা তৈরি হয়েছে সুনীল মণ্ডলকে ঘিরে। যা আরও উস্কে দিয়েছেন সাংসদ নিজেই। তাঁর বক্তব্য, ‘এটা সব জায়গাতেই পড়ছে, যে যাকে ভালবাসে সে তার পোস্টার লাগিয়ে দিচ্ছে, পাবলিককে তো আর আটকানো যাবে না, দলের বিরুদ্ধে কিছু কিছু ক্ষোভ আছে, সেগুলিই বেরিয়ে আসছে।’

অর্থাৎ দলের অন্দরেই যে নেতৃত্বকে নিয়ে ক্ষোভ, তা স্বীকার করে নিলেন তৃণমূল সাংসদ। যদিও এই সমস্ত পোস্টার-ফ্লেক্সের পিছনে বিজেপির চক্রান্ত দেখছে তৃণমূলের একাংশ। পূর্ব বর্ধমানের তৃণমূল মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাসের দাবি, ‘সুনীল মণ্ডল যোগ্য নেতা, আমাদের সঙ্গেই আছেন। বিজেপি এসব করে বেরাচ্ছে, পায়ের তলায় মাটি সরে গিয়েছে, তাই বিজেপির এটা চক্রান্ত, এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে পোস্টার ফেলে বেরাচ্ছে। দলের সঙ্গেই সুনীল মণ্ডল আছে।’

পাল্টা পূর্ব বর্ধমানের বিজেপি সহ-সভাপতি রমন শর্মা বলেছেন, ‘শুধু সুনীল মণ্ডল কেন দলের অনেকেরই ক্ষোভ, ওই দলে কোনও গণতন্ত্র নেই, পিসি-ভাইপো লিমিটেড কোম্পানি, একে একে ক্ষোভ বেরিয়ে আসছে।’

তৃণমূল সাংসদের সমর্থনে ফ্লেক্স ঘিরে যখন জল্পনা তুঙ্গে, তখন বর্ধমান শহরের বিভিন্ন জায়গায় ফের দেখা গেল শুভেন্দু অধিকারীর সমর্থনে পোস্টার। সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কবিতার বিভিন্ন পংক্তি। তবে এবার দাদার অনুগামীরা নন, প্রচারে শুভেন্দুর ফ্যান ক্লাব। শুধু পোস্টারেই থেমে নেই শুভেন্দুর অনুগামীরা। এদিন মেমারির রসুলপুরে, রাস্তায় নেমে মাস্ক ও স্যানিটাইজারও বিতরণ করেন তাঁরা। মন্ত্রিত্ব ছাড়ার আগেই সরকারি নিরাপত্তারক্ষী ছেড়ে দিয়েছেন শুভেন্দু। এই প্রেক্ষাপটে দাদার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত তাঁর অনুগামীরা। সবমিলিয়ে তৃণমূল বিধায়ক-সাংসদদের নিয়ে ক্রমেই বাড়ছে জল্পনা।