সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে সিবিআই দাবি করেছে, তাপস পাল তাঁর অভিনেতা এবং রাজনীতিক, দুই সত্ত্বাকেই ব্যবহার করেছেন। একদিকে মঞ্চ থেকে নায়কোচিত ভঙ্গিতে ভাষণ দিয়েছেন। আর সেই ভাষণে বারবার নিজের সাংসদ পরিচয় এবং রাজনৈতিক যোগাযোগের কথা তুলে ধরেছেন। যা শুনে এজেন্টরা ভরসা পেয়েছেন।
সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে রোজভ্যালির অনুষ্ঠানে দেওয়া তাপস পালের বক্তৃতার একটি অংশও সিবিআই উল্লেখ করেছে। সিবিআই-এর দাবি, যেখানে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ বলেন,
গৌতম কুণ্ডু ভাল কাজ করছেন। রোজভ্যালি ভাল কোম্পানি। সরকার যা করতে পারেনি, গৌতম কুণ্ডু কর্মসংস্থান দিয়ে তা-ই করছেন। আপনারা ভাল করে কাজ করুন। আমরা পাশে আছি।
সিবিআইয়ের দাবি, এর বিনিময়ে রোজভ্যালি থেকে আর্থিক ও নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন তাপস পাল। সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা দাবি করেছে,
তাপস পাল যে শুধু নিজে রোজভ্যালি থেকে বেতন নিয়েছেন এমন নয়। তাঁর স্ত্রী রোজভ্যালির একটি চ্যানেলে অনুষ্ঠান করতেন। তাঁর মেয়ে রোজভ্যালির প্রযোজনায় ছবি করেছেন। এমনকী, নিজের ভাইঝিকে পর্যন্ত তিনি রোজভ্যালিতে মোটা বেতনের চাকরি পাইয়ে দেন।
চার্জশিটে সিবিআই এই দাবিও করেছে, তাপস পাল নিজে রোজভ্যালি থেকে বেতন বাবদ পেয়েছেন মোট ২৬ লক্ষ ১৫ হাজার ৬৪৭ টাকা। আর এই সংস্থা থেকে তাঁর পুরো পরিবার বেতন বাবদ পেয়েছে ৫৫ লক্ষ ১০ হাজার ১৫৫ টাকা।
তবে তাপস পালের বেতন নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি,
তাপস পালকে রোজভ্যালির ফিল্ম ডিভিশনের পরামর্শদাতা গোষ্ঠীর ডিরেক্টর হিসেবে দেখানো হত। কিন্তু, তদন্তে নেমে দেখা যায় রোজভ্যালির অধীনে এমন কোনও গোষ্ঠীই নেই। অথচ এই পদে থাকার জন্য তিনি নিয়মিত মোটা টাকা বেতন পেয়েছেন।
চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, বেতন ছাড়াও রোজভ্যালি থেকে নিয়মিত আর্থিক সুযোগ সুবিধা আদায় করতেন তিনি।
২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর গৌতম কুণ্ডুর অফিসে গিয়ে ২ লক্ষ টাকা নেন তাপস পাল।
রোজভ্যালির এক ক্যাশিয়ারের উপস্থিতিতে এই লেনদেন হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তাপস পাল নিজের গাড়ির চালককে পাঠিয়ে রোজভ্যালি থেকে টাকা আনাতেন।
রোজভ্যালির এই ক্যাশিয়ার এবং তাপস পালের গাড়িচালকের নাম সিবিআই সাক্ষী তালিকায় রেখেছে। তাঁদের গোপন জবানবন্দিও চার্জশিটে নথি হিসেবে পেশ করা হয়েছে।
এছাড়াও, সিবিআই-এর চার্জশিটে তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের বিরুদ্ধে আরও দু’টি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ রয়েছে।
সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে সিবিআই দাবি করেছে, ২০১০ সালের ২ জুন ১৬টি বেআইনি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে চিঠি দেন তাপস পাল। কিন্তু, এই তালিকায় রোজভ্যালির নাম ছিল না।
এছাড়াও, রোজভ্যালি সম্পর্কে আরবিআই-এর মনোভাব বুঝতে ২০১০ সালের ২৯ মে নিজের লেটার হেডে একটি চিঠি পাঠান তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল।
সিবিআই-এর দাবি, গৌতম কুণ্ডুর নির্দেশেই এগুলি করেছিলেন তাপস পাল। যদিও, তাপস এবং তাঁর ঘনিষ্ঠরা বারবার দাবি করেছেন, রোজভ্যালির কাছ থেকে বেতন ছাড়া কোনও অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা তিনি কোনওদিন নেননি।