শিলিগুড়ি: সবং থেকে শুরু করে নোয়াপাড়া, উলুবেড়িয়া। পরপর কয়েকটি লোকসভা ও বিধানসভা উপনির্বাচনে বিরোধীদের পর্যুদস্ত করে এবার পঞ্চায়েত ভোটের আগে সেই বিরোধীদেরই একসারিতে ফেলে আক্রমণ শানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘুরিয়ে বার্তা দিলেন, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে একাই লড়বে তৃণমূল।
এদিন শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে দলের ছাত্র যুব সমাবেশে ভাষণ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি একযোগে কংগ্রেস, বাম ও বিজেপিকে আক্রমণ করেন। বামফ্রন্টকে নিশানা করে মমতা বলেন, একটা কর্পোরেশনের দায়িত্বে রয়েছে সিপিএম। কিন্তু কোনও কাজ করে না, শুধু গণ্ডগোলের রাজনীতি করে। কংগ্রেসকে তাঁর কটাক্ষ, ‘না ঘর কা না ঘাটকা’। তাঁর দাবি, সিপিএমের সঙ্গে যোগসাজস করে বাংলার রাজনীতির বদনাম করেছে কংগ্রেস। আবার বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, এখন আর একটি নতুন দল বিজেপি, তাদের হাতে প্রচুর টাকা।
সম্প্রতি উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্র ও নোয়াপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। এই প্রেক্ষিতে সোমবার শিলিগুড়ির সমাবেশে মমতার প্রধান নিশানা ছিল বিজেপি।কখনও হাতিয়ার করেছেন সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ। বলেন, ‘অসমে বসে কোচবিহারে কীভাবে দাঙ্গা লাগানো যায় ? উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে কীভাবে দাঙ্গা লাগানো যায়, সেই দিকেই এই দলের নজর। তিনি যোগ করেন, বিজেপি উত্তরবঙ্গে উন্নয়ন করতে আসে না, শুধু বাক্স নিয়ে আসে। বাক্সে টাকা আছে, না কী আছে, কেউ জানে না। দাঙ্গা লাগানো, বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে মদত দেয় বিজেপি। অসমে যখন দাঙ্গা হয়, তখন জলপাইগুড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন অসমবাসীরা।
বিভিন্ন ইস্যুতে এদিন মমতা সুর চড়ান কেন্দ্রের বিরুদ্ধেও। বলেছেন, ‘কেন্দ্র সবচেয়ে বেশি বঞ্চনা করছে বাংলাকে। বাংলাকে বঞ্চনা করে তৃণমূলকে মাথা নত করা যাবে না। ভারতের মধ্যে সবচেয়ে স্বচ্ছ তৃণমূল। তবুও তৃণমূলের মাথা নত করানোর জন্য ষড়যন্ত্র করছে কেন্দ্র। তিনি যোগ করেন, এই জন্যই সরব অন্ধ্রপ্রদেশ। অন্ধ্রপ্রদেশকে বঞ্চনা করছে কেন্দ্র, অন্ধ্রপ্রদেশের পাশে আছি। মমতা জানিয়ে দেন, তিনি কখনও জীবনে মাথা নত করবেন না। কখনও জীবনে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করবেন না।
উন্নয়নের প্রসঙ্গেও কেন্দ্রের শাসক দলকে নিশানা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ‘বিজেপি বাম্বুমিশন তৈরি করে, আর উন্নয়ন করে তৃণমূল। বিনা পয়সায় সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেয় তৃণমূল। বিনা পয়সায় স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে পারবে বিজেপি ?’ তিনি যোগ করেন, ‘কোনও চা বাগান খোলেনি বিজেপি। তৃণমূল উদ্যোগ নিয়ে দুটি চা বাগান খুলে দিয়েছে। মমতার দাবি, সোশ্যাল নেটওয়ার্কে মিথ্যা কথা প্রচার করে বিজেপি। বলেন, মিথ্যা কথায় কান দেবেন না।
এদিন তৃণমূলনেত্রীর কথাতে উঠে আসে উত্তরবঙ্গের প্রসঙ্গও। পূর্বতন বাম জমানাকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘উত্তরবঙ্গকে আগে সবাই দুয়োরনি বলত। উত্তরবঙ্গের প্রতি কেউ আগে গুরুত্বই দিত না। আমাদের সময়ে উত্তরবঙ্গে আরও দুটি জেলা তৈরি হয়েছে। তৃণমূল যেমন দক্ষিণবঙ্গকে ভালোবাসে, তেমন উত্তরবঙ্গকেও ভালোবাসে। এখন উত্তরবঙ্গের প্রচুর উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘পাহাড় থেকে অরণ্য, সব জায়গায় হবে উন্নয়ন। ‍তৃণমূল আসলে যৌথ নেতৃত্ব। তৃণমূল কংগ্রেস সবাইকে নিয়ে চলে।
তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়েও মন্তব্য করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, বাংলায় কন্যাশ্রী প্রকল্প ছিল, এবার রূপশ্রী প্রকল্প চালু করেছে তৃণমূল। মেয়েদের বিয়ের জন্য রূপশ্রী প্রকল্প, এমন সরকার কোথায় আছে? প্রায় ৪৫ লক্ষ মেয়ে কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতাভুক্ত। ৮১ লক্ষ ছেলেমেয়ের চাকরি করে দিয়েছি। আমরা মুখে বলি না, আমরা কাজ করে দেখাই।
তাঁর দাবি, কৃষকদের স্বার্থে কাজ করছে তৃণমূল। চাষিরা কম পয়সায় জিনিস বিক্রি করতে বাধ্য হতো। নতুন জমানায় তা অতীত। বলেন, কৃষকদের খাজনা মকুব করে দিয়েছি। কৃষকদের জমির বীমা করিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার।
পরীক্ষা শেষের পর জেলায় জেলায় কর্মসূচি করতে হবে বলে দলীয় কর্মীসদস্যদের নির্দেশ দেন তিনি। বলেন, এপ্রিল পর্যন্ত মিটিং-মিছিল করা যাবে না। ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধার কথা মাথায় রাখতে হবে। পরীক্ষা চলাকালীন রুদ্ধদ্বার বৈঠক করবেন। পরীক্ষার দিন বাদ দিয়ে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক চলাকালীন জেলায় জেলায় ছাত্র কনভেনশন করবেন। করবেন।
মমতা জানিয়ে দেন, ‘জনবিরোধী কোনও কাজ করবে না তৃণমূল। তিনি বলেন, আগামীতে গোটা দেশে তৃণমূল একটা বড় ভূমিকা পালন করবে। তৃণমূলে নেতা বড় নয়, কর্মীরাই আমাদের সম্পদ। বাংলাই ভারতবর্ষকে পথ দেখাবে।