হুগলি:  ছাত্র সংসদের মধ্যেই মহিলা পদাধিকারীকে মারধর। শারিরীক নির্যাতনের অভিযোগে কাঠগড়ায় টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের জিএস। যিনি উপ পুরপ্রধানের ছেলে।
প্রথমে আঙুল উঁচিয়ে শাসানি। তারপর কষে থাপ্পড়! জামার হাতা গুটিয়ে ব্যাগ দিয়ে মার! মারতে মারতে সজোরে ঘাড় ধাক্কা! এরপর ঘরের কোণে নিয়ে নিয়ে তলপেটে লাথি! তারপর আবার কিল, চড়, ঘুষি! পোশাক ধরে হ্যাঁচকা টান! সব শেষে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মার! শিউড়ে ওঠার মতো ঘটনা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত একটি ছাত্র সংসদের! যা ধরা পড়েছে হুগলির রিষড়ার বিধান চন্দ্র কলেজের সিসি ক্যামেরায়!
যিনি এভাবে মারছেন তাঁর নাম শাহিদ হাসান খান। টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক! আর যিনি মার খাচ্ছেন, নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন, তিনি ওই ছাত্র সংসদেরই মহিলা পদাধিকারী। টিএমসিপিরই নেত্রী!
ছাত্র সংসদের সিসিটিভি ক্যামেরায় এই ছবি গত ৪ ডিসেম্বরের। তবে অভিযোগকারী টিএমসিপি নেত্রীর দাবি, প্রায়ই তাঁকে এভাবে মারধর ও নির্যাতন করতেন কলেজের জিএস! দেওয়া হত খুনের হুমকি! যার পুনরাবৃত্তি হয় বুধবারও!
ক্যামেরায় সব কীর্তি ধরা পড়লেও, বুধবার অভিযুক্ত টিএমসিপি নেতা দাবি করেন, কিছুই হয়নি! তাঁর দাবি, কিছুই হয়নি। একটু ইয়ার্কি করছিলাম। নিগৃহীতাকে নিজের বন্ধু বলেও দাবি করেন শাহিদ।
এদিকে, তাঁর কীর্তি ঘিরে চারদিকে যখন ছিছিকার পড়ে গিয়েছে, তখন বৃহস্পতিবার টিএমসিপি নেতা আঙুল তুললেন, আক্রান্ত ছাত্রীর দিকেই! তাঁর দাবি, আক্রান্ত তরুণী তাঁকে আগে মারেন। বলেন, একসঙ্গে বসেছিলাম। ও আমাকে আগে মেরেছে। আমি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছি। ও মদ খেয়ে এসেছিল। অভিযোগকারিণী অবশ্য বলছেন, এটা প্রথম নয়। কয়েক মাস ধরেই চলছিল অত্যাচার!

অভিযুক্ত এই টিএমসিপি নেতার আরও একটি পরিচয় রয়েছে! তিনি তৃণমূল পরিচালিত রিষড়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান খানের ছেলে! চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি-র কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন বিধানচন্দ্র কলেজের তৃতীয় বর্ষের এই ছাত্রী। সিসি ক্যামেরায় মারধর ও নির্যাতনের ছবি ধরা পড়লেও, এখনও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

এদিকে, কলেজের ইউনিয়ন রুমে একটি মেয়ের সাথে এমন বর্বর আচরণের ছবি সামনে আসার পর সরগরম রাজনীতিও। এই ছবি সামনে আসার পর তৃণমূল ছাত্র পরিষদ তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। টিএমসিপি রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত বলেন, জিএস পদ থেকে বরখাস্ত। প্রাথমিক সদস্যপদ খারিজ।
তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বও বুঝিয়ে দিয়েছে, এই ধরনের ঘটনা তারা কোনওভাবেই বরদাস্ত করবে না। দলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, এটা পুরনো ভিডিও। তবুও আমি জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তর কাছে রিপোর্ট তলব করেছি। খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবেন। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। ঘটনাটিকে নিন্দাজনক বলে উল্লেখ করেন উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল।

সংগঠন এবং দল কড়া ব্যবস্থা নিলেও, তৃণমূলকে আক্রমণের সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ বিরোধীরা। কটাক্ষের সুরে তাদের দাবি, রিষড়া বিধানচন্দ্র কলেজের সিসি ক্যামেরায় যা ধরা পড়েছে, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র! গোটা রাজ্যজুড়েই এটা চলছে! বিজেপি কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহর দাবি, এভাবেই সর্বত্র তৃণমূল চলছে।
হুগলির ঘটনাকে হাতিয়ার করে তৃণমূলকে একযোগে নিশানা করেছে সিপিএম ও কংগ্রেস। সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, সবই মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণা। কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী বলেন, আরাবুলের জগ ছুড়ে মারা, বোমা মারা। রাজ্যজুড়ে গুণ্ডারাজ। সরকারটা যাওয়া উচিত।
আর এই রাজনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে আক্রান্ত ছাত্রীর। তিনি বলেন, একজন টিএমসিপি নেতা মেয়েদের গায়ে এভাবে হাত দেবে! বলেছে বাড়িতে গুণ্ডা পাঠিয়ে দেবে। খালি খুনের হুমকি। বাবার সাহায্য নিয়ে ও সব করতে পারে, কলেজ মানেই এখন আতঙ্ক। আজ টিএমসিপির কয়েকজনকে বাড়িতে পাঠিয়েছিল। মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বাবাও!

অনেকেরই বক্তব্য, দল বা সংগঠন কী ব্যবস্থা নিল, তার চেয়েও অনেক বড় হল, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিল! কারণ, এটা তো আর নিছক দলীয় বিষয় নয়, এক তরুণীর উপর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ। নানা মহলে প্রশ্ন, শাসক দলের হওয়াতেই কি পুলিশ অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতাকে গ্রেফতার করছে না?