কলকাতা:  উত্তরবঙ্গে প্রবল বৃষ্টির জেরে বিপর্যস্ত রেল পরিষেবা। বীরভূমের মুরারই স্টেশনে প্রায় দশ ঘণ্টা আটকে থেকে কলকাতায় ফিরল দার্জিলিং মেল। খাবার, পানীয় জল না পেয়ে চরম দুর্ভোগে যাত্রীরা।
উত্তরবঙ্গে প্রবল বৃষ্টির জেরে অনেক জায়গাতে জলের তলায় রেল লাইন। আর তার জেরে বিপর্যস্ত ট্রেন চলাচল। শনিবার রাত ১০টা ৫ মিনিট। শিয়ালদা স্টেশনের নাইন-বি প্লাটফর্ম থেকে ছাড়ে ১২৩৪৩ আপ দার্জিলিং মেল। গন্তব্য নিউ জলপাইগুড়ি। কিন্তু সাড়ে চার ঘণ্টা পরেই বিপত্তি।
শনিবার রাত আড়াইটে নাগাদ শিয়ালদা থেকে প্রায় ২৬০ কিলোমিটার দুরে বীরভূমের মুরারই স্টেশনে দাঁড়িয়ে যায় আপ দার্জিলিং মেল।
রাতভর ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকে একই জায়গায়। কমে আসতে থাকে খাবার ও পানীয় জলের জোগান। অভিযোগ, সকাল থেকে বন্ধ হয়ে যায় এসি। খাবার, পানীয় জলের অভাবে অনেকে ট্রেন থেকে নেমে সড়ক পথ ধরেন।
শেষমেষ দার্জিলিং মেলকে কলকাতায় ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় রেল। রবিবার দুপুর ১২টা নাগাদ ইঞ্জিন খুলে তা পিছনের দিকে লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। অবশেষে দুপুর একটা নাগাদ কলকাতা উদ্দেশ্যে রাওনা দেয় দার্জিলিং মেল।
কিন্তু রেললাইন জলমগ্ন জেনেও, কেন শিয়ালদা থেকে ছাড়া হল ট্রেন? কেন এভাবে যন্ত্রণা দেওয়া হল? প্রশ্ন উঠছে। রেলের দাবি, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার পরই ট্রেন ছাড়া হয়েছিল। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ জটিল আকার ধারণ করায় ট্রেন এগোনো যায়নি। কিন্তু যাত্রীদের এই হয়রানির দায় কি এড়াতে পারে রেল? প্রশ্ন ভুক্তভোগী যাত্রীদের।
শুধু দার্জিলিং মেল নয়, বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে বহু দূরপাল্লার ট্রেন। বাতিল করা হয় অসংখ্য ট্রেন। সবমিলিয়ে চরমে ওঠে দুর্ভোগ।
রবিবার সকালে বীরভূমের সাঁইথিয়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে যায় ডিব্রুগড় কন্যাকুমারী এক্সপ্রেস। দীর্ক্ষণ ট্রেন না ছাড়ায় এবং খাবার ও পানীয় জল না অভিযোগে পাওয়ায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন যাত্রীরা।
নিউ কোচবিহার স্টেশনে দাঁড়িয়ে যায় অবোধ-অসম ও কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস। যাত্রীরা অভিযোগ করেন, ট্রেনে জল পাওয়া যাচ্ছে না। বাসী খাবার দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, পদাতিক এক্সপ্রেসকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। দীর্ঘক্ষণ ট্রেন না চাড়ায় দুর্ভোগ চরমে ওঠে যাত্রীদের। এক যাত্রী বলেন, মোবাইলে চার্জ নেই। বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। খাবার পেতে সমস্যা হচ্ছে।
পাশাপাশি, মালদা টাউন স্টেশনে আপ উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস এবং মুর্শিদাবাদের নিমতিতা স্টেশনে আপ কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসও দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকে। দুপুরের দিকে দু’টি ট্রেনকেই শিয়ালদায় ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেয় রেল কর্তৃপক্ষ।
শুধু আটকে পড়া ট্রেন ফিরিয়ে আনাই নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাতিল করা হয়েছে বহু ট্রেন। শিয়ালদা থেকে বাতিল করা হয়েছে দার্জিলিং মেল, পদাতিক এক্সপ্রেস, কাঞ্চমজঙ্ঘা এক্সপ্রেস, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, তিস্তা-তোর্সা এক্সপ্রেস ও মা-তারা এক্সপ্রেস।
অন্যদিকে, হাওড়া থেকে বাতিল করা হয়েছে সরাইঘাট ও কামরূপ এক্সপ্রেস। বাতিল হয়েছে হলদিবাড়ি-কলকাতা সাপ্তাহিক ইন্টার সিটি এক্সপ্রেসও।
কোচবিহার থেকেও আপ ও ডাউন সমস্ত ট্রেন বাতিল করা হয়। সব মিলিয়ে দিনভর দুর্ভোগ পোহাতে হয় ট্রেন যাত্রীদের।