কলকাতা: অতীত থেকে শিক্ষা?রামের আরাধনায় এবার তৃণমূলও!বঙ্গ রাজ্যনীতিতে ধর্মের প্রভাব জোরালো হচ্ছে?
বাঙালির বারো মাসে তের পার্বণ! রাজনীতির সৌজন্যে বাঙালির পার্বণের তালিকায় এখন ঢুকে গেছে রামনবমীও। রামের জন্মদিন এ রাজ্যে কোনওদিনই উৎসবের আকারে পালিত না হলেও, গতবছর থেকে গেরুয়া শিবিরের হাত ধরে তার সূচনা হয়! যে রামনবমীতে বিজেপি নেতাদের হাতে অস্ত্রের ঝলকানি, রাজনীতিতেও ঢেউ তুলেছিল! বাগযুদ্ধে জড়িয়েছিল তৃণমূল-বিজেপি। যার পাল্টা বীরভূমে তৃণমূলকে হনুমানজয়ন্তী পালন করতে দেখা গিয়েছিল! কিন্তু, এবার আর রামভক্তপুজোর জন্য অপেক্ষা করতে রাজি নয় শাসক দল! বিজেপিকে টেক্কা দিতে আগেভাগেই রামনবমী পালনের জোরদার প্রস্তুতিতে মেতেছে তারা।
গত শুক্রবার দলের কোর কমিটির বৈঠকেই রামনবমী পালন নিয়ে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়া বিজেপি বলেছে, বিপদে পড়ে রাম নাম জপছে তৃণমূল।
কয়েক মাস আগে বীরভূমে ব্রাহ্মণ সম্মেলন করতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে। এবার রামনবমী পালনেও তাঁর জেলা নেতৃত্ব সর্বাগ্রে।
ভোট আসলেই ধর্মকে ব্যবহার করার অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরে অভিযুক্ত যে বিজেপি, সেই তারাই এখন তৃণমূলকে কটাক্ষ করছে।
তৃণমূল শিবিরের পাল্টা বক্তব্য, ধর্মীয় আচার আচরণ পালনের অধিকার সবার আছে। কিন্তু, ভোট উন্নয়ন দেখে হয়, ধর্ম দেখে নয়।


সূত্রের খবর, সঙ্ঘ পরিবার এবারও ঘটা করেই রামনবমী পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবার একই দিনে রাম পুজোয় তৃণমূলও। যুযুধান দু’পক্ষের বাগযুদ্ধে ফের রাজ্য রাজনীতিতে লঙ্কাকাণ্ড বাধবে না তো?
এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, গোবলয়ের মতো বাংলাতেও কি এবার ঢুকে পড়ছে ধর্ম নিয়ে রাজনীতির প্রবণতা?
অনেকে বলছেন, ধর্ম যখন রাজনীতির হাতিয়ার, তখন কে কত বড় ধার্মিক তা নিয়ে কড়া টক্কর হতেই পারে!
রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, দেশভাগের পরে এ রাজ্যের মানুষ কংগ্রেসকে, সিপিএমকে ভোট দিয়েছে। পরে তৃণমূলকে দিয়েছে। এখন রাম মন্দির তৈরি হবে। তাই দলে দলে মানুষ বিজেপিতে আসছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই বলেছেন, তিনি হিন্দু। বিজেপির কাছ থেকে হিন্দুত্ব শিখবেন না তিনি।
গত বছর অস্ত্র সহকারে রামনবমী পালন করে রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় তুলেছিল গেরুয়া শিবির। আর এবার রাম-নাম মুখে করে রামনবমী পালন করতে আসরে তৃণমূল! এই সুযোগে দু’দলকে এক সারিতে বসিয়ে আক্রমণ শানাচ্ছে সিপিএম।
গোবলয় কিংবা পশ্চিমি রাজ্যে ধর্মের ব্যবহার নতুন কিছু নয়। উত্তরপ্রদেশে ভোটের সময় খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে শোনা গিয়েছিল শ্মশান-কবরস্থানের কথা।
তিনি বলেছিলেন, গ্রামে কবরস্থানের জায়গা করা হলে শ্মশানও বানানো উচিত। রমজানের সমান বিদ্যুৎ দীপাবলিতেও দিতে হবে।
তেমনই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীও উত্তরপ্রদেশের ভোটের সময় কিংবা গুজরাতের ভোটের সময় মন্দিরে মন্দিরে ঘুরেছেন! ধর্ম কাউকে ডিভিডেন্ট দিয়েছে, কাউকে হয়ত দেয়নি! কিন্তু, মূল প্রশ্নটা হল একসময় যে বাঙালি গর্ব করে বলত, এ রাজ্যে সাম্প্রদায়িক কার্ড খেলা চলে না, সেই বঙ্গেও কি ধর্মের রাজনীতি ক্রমেই জাঁকিয়ে বসছে?