করুণাময় সিংহ, মালদা:  উত্তরাখণ্ডের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আঁচ এবার সরাসরি এসে পড়ল এরাজ্যে। চামোলির বিপর্যয়ে নিখোঁজ মালদার ইংরেজবাজারের ভগবানপুর গ্রামের বাসিন্দা আনেশ শেখ। 


চামোলির জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করতেন বছর ঊনচল্লিশের ওই শ্রমিক। পরিবার সূত্রে খবর, লকডাউনের সময় চামোলিতে থাকলেও, ৪ মাস আগে বাড়ি ফেরেন আনেশ শেখ। 


একমাস থাকার পর, মাসতিনেক আগে ফের ফিরে যান। পরিবারের দাবি, ঘটনার দিন সকালে শেষবার ফোনে কথা হয়। তারপর থেকেই আর যোগাযোগ করা যায়নি। 


গ্রামের বাড়িতে আশঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে ওই শ্রমিকের পরিবার। তাঁর খোঁজ পেতে রাজ্য প্রশাসনের মাধ্যমে উত্তরাখণ্ড সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।


টানাটানির সংসারে স্বচ্ছলতার খোঁজে উত্তরাখণ্ডে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজে গিয়েছিলেন ওই যুবক। ঘরে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে। রবিবারের সকালেও আনেশের সঙ্গে ফোনে কথা হয় পরিবারের। বিপর্যয়ের পর থেকে তাঁর খোঁজ না পাওয়ায় পরিবারের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে।


নিখোঁজ শ্রমিকের স্ত্রী রেহেনা বিবি বলেন, ‘‘লকডাউনে বাড়িতে ছিল, একমাস বাড়িতে থাকার পর আবার চলে যান কাজে। যেদিন দুর্ঘটনা ঘটে সকাল আটটা নাগাদ ফোনে কথা হয়, আর ফোন আসেনি, যতবার চেষ্টা করেছি ততবার সুইচড অফ ৷’’


ওই শ্রমিকের বাড়ির আশেপাশের কয়েকজন আগে উত্তরাখণ্ডে কাজ করেছেন। চামোলির ঘটনায় পড়শির জন্য উদ্বিগ্ন তাঁরা। প্রতিবেশী শেখ সাবিরুলের কথায়, ‘‘চামোলি এলাকাটি ভয়ঙ্কর, আমি ২০০৪ সালে গিয়ে কাজ করেছি, যা ছবি দেখলাম তাতে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷’’


মালদা জেলা পরিষদের সদস্য অর্চনা মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা খবর পেয়েছি, জেলাশাসককে বলেছি উত্তরাখণ্ড প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার, পরিবারের পাশে আছি ৷’


তুষারধস, হড়পা বানে বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ডের চামোলিতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে উদ্ধারকাজ। আড়াই কিলোমিটার লম্বা তপোবন সুড়ঙ্গে প্রায় ৩৫ জন আটকে রয়েছেন বলে আশঙ্কা। 


সুড়ঙ্গের ভিতরে মাটি, পাথর, কাদা জমে থাকায় তা দুর্গম হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে খনন কাজ চালিয়ে রাস্তা তৈরি করে দেওয়াল হাতড়ে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করছেন সেনা জওয়ানরা। 


জোশীমঠের কাছে এই টানেলে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, ভারতীয় সেনা, আইটিবিপি, এনডিআরএফ এবং এসডিআরএফ-এর জওয়ানরা।


নিকষ অন্ধকার সুড়ঙ্গে জওয়ানদের হেলমেটে লাগানো আলোটুকুই ভরসা। সুড়ঙ্গের বাইরে অপেক্ষা করছে মেডিক্যাল টিম। আটকে পড়া কাউকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেই যাতে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়। 


প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩২ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। এখনও নিখোঁজ ২০৬ জন। 


লোকসভায় উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয় প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, টানেলে আটকে থাকা শ্রমিকদের দ্রুত উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে।