কল্যাণী ও কলকাতা: আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ধরণীধর পাত্রকে লাথি মারার অভিযোগ। উপাচার্য ধরণীধর পাত্রের অভিযোগ, আজ বিকেলে ঘেরাও চলাকালীন ঘর থেকে বেরোনোর সময় কেউ বা কারা তাঁর পিছনে লাথি মারে। নেপথ্যে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ কর্মীরাই জড়িত বলে সরাসরি অভিযোগ উপাচার্যের। লাথি মারার অভিযোগ অস্বীকার যৌথমঞ্চের।
বিক্ষোভ ...ঘেরাও....থেকে অশালীন মন্তব্য....এ সবই দেখেছে রাজ্য।এবার উপাচার্য নিগ্রহের ঘটনায় নয়া সংযোজন, পেছনে হাঁটু দিয়ে মারার অভিযোগ! অভিযুক্ত তৃণমূল।
উপাচার্যর পদত্যাগ ও রেজিস্ট্রারের অপসারণের দাবিতে, গত এক মাস ধরে উত্তাল কল্যাণীর বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। লাগাতার অবস্থান-বিক্ষোভের জেরে, তিন দিন ধরে মোহনপুর, বর্ধমান ও বাঁকুড়া ক্যাম্পাসের পঠনপাঠন পুরোপুরি বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ খামারগুলির গবেষণাও কার্যত শিকেয়। ছাত্র-শিক্ষাকর্মী-আধিকারিক, এমনকি অধ্যাপকদের একটা বড় অংশ, উপাচার্যের ঘরের বাইরে আন্দোলনে সামিল।


নামে যৌথমঞ্চ, কিন্তু কার্যত সবাই তৃণমূলের!

বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে গিয়েও মালুম হল, আন্দোলনে তৃণমূলের উপস্থিতি।

প্রশ্ন উঠছে, কোনও দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন হতেই পারে..কিন্তু তাই বলে উপাচার্যকে লাথি মারার অভিযোগ! টিএমসিপি ইউনিট সভাপতি তরুণ সরকার অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন। তিনি বললেন, এ ধরনের কোনও ঘটনাই ঘটেনি।
যৌথমঞ্চ আহ্বায়ক মুশিয়ার আলির অভিযোগ, স্বজনপোষণ চলছে। উপাচার্য স্বৈরাচারী মানসিকতা দেখাচ্ছেন। কয়েকটি পদে নিজের লোক বসিয়েছেন।
যদিও, যৌথমঞ্চের তোলা সব অভিযোগই নস্যাৎ করে দিয়েছেন উপাচার্য।

উপাচার্যের ঘরের বাইরে অবস্থান....তালাবন্ধ রেজিস্ট্রারের ঘর...কার্যত অচলাবস্থা বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টাকে বিষয়টি জানিয়েছেন উপাচার্য। খবর পৌঁছেছে কৃষি দফতরেও।
এই পরিস্থিতিতে, আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারির সুর, সিদ্ধান্তে অনড় থাকা উপাচার্যর গলায়।

এর আগেও উপাচার্যদের নিগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছে একাধিক ক্যাম্পাসে। ছাত্র আন্দোলনের জেরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসেই রাত কাটাতে হয়েছে উপাচার্যকে।

গত বছর একই ছবি দেখা গিয়েছিল কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়েও...পড়ুয়াদের একাংশের লাগাতার ঘেরাও-বিক্ষোভে রাতভর ক্যাম্পাসে আটকে থাকতে হয় উপাচার্য রতনলাল হাংলুকে। এতে বিরক্ত হয়ে পদত্যাগ করেন তিনি। রতনলাল হাংলুই ছিলেন, তৃণমূল আমলের সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিযুক্ত প্রথম উপাচার্য, যিনি নিজে থেকে পদত্যাগ করেন।

গত এপ্রিলে, বড়িশার ‘বিবেকানন্দ কলেজ ফর উইমেনে’ নিগৃহীত হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদানীন্তন উপাচার্য সুগত মারজিত....এই ঘটনাতেও নাম জড়ায় তৃণমূলের।

বাম আমলে, একসময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য সন্তোষ ভট্টাচার্যকেও বাড়ি থেকে অফিস চালাতে হয়েছিল।
কলকাতা থেকে ৫১ কিলোমিটার দূরে, কল্যাণীর বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও কি এবার সেই ছবি দেখা যাবে?