হুগলি: বাংলায় পা রাখলেন মিম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। ফুরফুরা শরিফে গিয়ে দেখা করেলেন আব্বাসউদ্দিন সিদ্দিকীর সঙ্গে। বিধানসভা ভোটের আগে এই সাক্ষাৎকার ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন জল্পনা।


তিনি বলেন, ‘বাংলায় দলের কাজ শুরু হয়ে গেছে। ফুরফুরা শরিফে আব্বাস উদ্দিনের নেতৃত্বে এগিয়ে যাব। আব্বাস উদ্দিনের পাশে থাকবে মিম। আব্বাস উদ্দিন যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা সমর্থন করবে মিম।’

বিহার বিধানসভা ভোটে পাঁচটি আসন জয়ের পর মিমের নজর যে বাংলায়, তা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন আসাদউদ্দিন ওয়েইসি।


শুধু সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মালদা, মুর্শিদাবাদ নয়, রাজ্যজুড়ে শাখাপ্রশাখা ছড়িয়ে তৃণমূলের সঙ্গে তারা যে টক্কর দিতে চায় তাও জানিয়ে দিয়েছে মিম। যদিও ওয়েইসির বাংলা সফরকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল।


জেলায় জেলায় সংগঠন তৈরির কাজ শুরু করে দিলেও, রাজ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও আত্মপ্রকাশ করেনি হায়দরাবাদের ওয়েইসির দল অল-ইন্ডিয়া-মজলিস-এ-ইত্তেহাদ-আল-মুসলিমিন বা মিম।


তবে, গতমাসের মাঝামাঝি সময়ে একুশের ভোটের আগে বাংলায় জমি তৈরি করতে রাজ্যে আসার আগে হায়দরাবাদে বাংলার দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মিম প্রধান।


দলীয় সূত্রে খবর, একুশের ভোটের রণকৌশল ও বাংলায় দলের সংগঠন নিয়ে বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা হয়। মিম সূত্রে দাবি, বৈঠকে বাংলায় আসার কথা জানান ওয়েসি।


দলের জাতীয় মুখপাত্র আসীম ওয়াকার বলেন, আসাদউদ্দিন আসছেন বাংলায়, ওনার সঙ্গে বাংলায় ভোট নিয়ে কথা হয়েছে, ফিডব্যাক নিয়েছে, উনি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বাংলাকে, আমরা ভোটে লড়ব।


মিম সূত্রে খবর, অনলাইনের মাধ্যমে বাংলায় দলের সদস্য সংখ্যা ২ লক্ষ হলেও, সক্রিয় সদস্যের সংখ্যা ৫ হাজার। মূলত দুই দিনাজপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মিমের সক্রিয়তা সীমাবদ্ধ।


ওয়েইসির সঙ্গে বাংলার নেতাদের আলোচনায় ঠিক হয়, শীঘ্রই হায়দরাবাদ থেকে মিমের একটি দল আসবে বাংলায়। মিমের প্রতিনিধিরা জেলায় জেলায় গিয়ে সাংগঠনিক শক্তি খতিয়ে দেখবেন। তাঁদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই ঠিক হবে বাংলায় কটা আসনে লড়বে মিম।


মিম সূত্রে আরও খবর, বৈঠকে ওয়েইসি জানান, মিমের বাংলার নেতাদের সঙ্গে ভাল বৈঠক হয়েছে। বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে তাঁদের মতামত শুনেছি।


যদিও বাংলায় মিমের পদধ্বনিতে আমল দিচ্ছে না তৃণমূল। তৃণমূল নেতা ও পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, যে কেউ বাংলায় আসতে পারেন, সংগঠন বিস্তার করবেন, তাতে কী আসে যায়।


পর্যবেক্ষকদের মতে, মহারাষ্ট্র থেকে উত্তরপ্রদেশ বা বিহার। সংখ্যালঘু ভোট কেটে বিজেপির সুবিধা করে দিয়েছে মিম। মিমের বিরুদ্ধে ভোট কাটুয়ার অভিযোগ করেছে বিজেপি বিরোধী দলগুলি। যদিও রাজ্য বিজেপির দাবি, বাংলায় মিম কোনও ফ্যাক্টরই নয়।

রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, মিম, সিম আলু পটল বাংলায় সুবিধা করতে পারবে না, বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির লড়াই, অন্য কেউ ফ্যাক্টর নয়।


সদ্য বিহার নির্বাচনে মিমের জেতা ৫টি আসনের মধ্যে চারটিই এক্কেবারে পশ্চিমবঙ্গের সীমানা ঘেঁষা। বাংলায় মিম লড়লে কার লাভ, কার ক্ষতি, তা নিয়ে শুরু হয়েছে হিসেব! এর কারণ হল পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট।


২০১১ থেকে এই ভোটব্যাঙ্ক কার্যত পুরোটাই তৃণমূলের দিকে। কিন্তু, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে সেই ছবি কিছুটা বদলে গিয়েছে। ১৮টি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত লোকসভা আসনের ৪টি তৃণমূলের থেকে বিজেপির হাতে গিয়েছে। এগুলি হল বালুরঘাট, কোচবিহার, বনগাঁ ও রানাঘাট।


মিমের এই সক্রিয়তার মধ্যে দিন কয়েক আগে বাংলায় মিমের মূল স্তম্ভ বলে দাবি করে শেখ আনোয়ার হুসেন পাশাকে দলে টানে তৃণমূল। তার আগে-পরেও বেশ কিছু মিম নেতা তৃণমূলে যোগ দেন। সদ্য যোগদানকারী মিম নেতাদের নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।

আসানসোলের নিয়াতপুরে তৃণমূলের বৈঠকে দলের বিধায়ক এবং যুব নেতার বিরুদ্ধে এদিন ক্ষোভ উগড়ে দিলেন মিম থেকে আসা নেতা। বৈঠক চলাকালীন দু’পক্ষের মধ্যে বচসা বাধে।