প্রকাশ সিনহা ও সঞ্চয়ন মিত্র, কলকাতা: ভোটের মধ্যে ভাইরাল অডিও ক্লিপ ঘিরে তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা। এই অডিও ক্লিপে দুই ব্যক্তির মধ্যে সিন্ডিকেট নিয়ে কথোপকথন শোনা গেছে। সিন্ডিকেট আসলে কী? সিন্ডিকেটের টাকা কোথায় যায়? এমন বিষয়ে দু’জনকে কথা বলতে শোনা গেছে এই অডিও ক্লিপে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী দত্তর নামও উঠে এসেছে কথোপকথনে। এই কণ্ঠস্বর কাদের, তা নিয়ে তদন্তে নেমেছে সিবিআই।


শুধু কয়লা নয়, ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপে সিন্ডিকেট নিয়েও দুই ব্যক্তির মধ্যে কথোপকথন ঘিরে ভোটের মধ্যে তোলপাড় বঙ্গ রাজনীতি। 


কণ্ঠ ১ : সিন্ডিকেট কী? সিন্ডিকেট নিয়ে অনেক শুনেছি। কাগজেও পড়েছি সিন্ডিকেটের কথা।
কণ্ঠ ২: সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাংলায় পেট ভরে।
কণ্ঠ ১ : সিন্ডিকেট আসলে কী?
কণ্ঠ ২: এই যে রাজারহাট-নিউটাউনে নির্মাণ কাজ চলছে, সেখানে রাজনৈতিকভাবে সিন্ডিকেট তৈরি করে দেওয়া হয়। বালি, পাথর, ইটের মতো কোনও সামগ্রী কিনতে গেলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিতে হবে। এভাবেই সিন্ডিকেট বিখ্যাত হয়ে গেছে।
কণ্ঠ ১ : সিন্ডিকেটের টাকা কোথায় যায়?
কণ্ঠ ২: কোনও জিনিসের দাম ধরুন ১০০ টাকা, সিন্ডিকেটওয়ালা ১২০ টাকা নেয়। নিম্নমানের জিনিস দেয়, মাপজোপে কারচুপি করে। সিন্ডিকেটওয়ালারা পয়সা কামাচ্ছে, আর রাজনৈতিক নেতারা ভাগ পেলেও এর থেকে দূরত্ব রাখেন। 
কণ্ঠ ২: সিন্ডিকেটের নেতা বিজেপিতে যোগ দেওয়া সব্যসাচী দত্ত।
কণ্ঠ ২: মানুষ কী করবে। এতটাই শয়তান যে ঘরে আগুন দিয়ে দেবে।
কণ্ঠ ১ : এমন করে!
কণ্ঠ ২: জনগণের সম্পদ। পুলিশ আসবেই না। কথা না শুনলে কারখানা লুঠ করে নেবে।
কণ্ঠ ১ : এদের লোকবল আছে?
কণ্ঠ ২: রাজনৈতিক দলগুলির কোনও চক্ষুলজ্জা নেই। ওরা সবকিছু করতে পারে। ঘরে গাঁজা রেখে দেবে। জাল নোট রেখে দেবে। অস্ত্র রেখে কেস দেবে। আমি এসব দেখেছি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ পাঁচ বছর এত ND কেস দিয়েছে বিরোধীদের, যে পুলিশও হাঁফিয়ে গেছে। খুব বিপজ্জনক এরা। 


এই বিষয়টিকে তদন্তের আওতায় নিচ্ছে সিবিআই-ও, যারা ইতিমধ্যে কয়লাকাণ্ডের তদন্তে নেমেছে। সিবিআই সূত্রে দাবি, তারা ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপটি জোগাড় করছে। অডিও টেপে যে দু’টি কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। 


বিজেপি দাবি করেছে, ভাইরাল অডিও ক্লিপে ব্যবসায়ী গণেশ বাগাড়িয়ার কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। সিবিআই সূত্রে দাবি, কয়লা মামলায় গণেশ বাগাড়িয়া একবার গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন। অডিও ক্লিপের কণ্ঠস্বরের সঙ্গে তাঁর কণ্ঠস্বর মিলিয়ে দেখা হবে। দ্বিতীয় কণ্ঠস্বরটি কার, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভাইরাল হওয়া এই অডিও টেপের সত্যতা যাচাই করেনি এবিপি আনন্দ। এরইমধ্যে সোমবার কয়লা পাচারকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালাকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। এই নিয়ে চতুর্থবার।


এদিকে, সিবিআই সূত্রে দাবি তথ্য গোপন করে তদন্তে অসহযোগিতা করছেন অনুপ ওরফে লালা। তাই তাঁকে হেফাজতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাতে পারে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। কয়লা পাচারকাণ্ডে রবিবারই বাঁকুড়া থানার আইসি অশোক মিশ্রকে গ্রেফতার করে ইডি। তার আগে পুরুলিয়ার প্রাক্তন পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। সঙ্গে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের SDPO দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।