সৌভিক মজুমদার, সমীরণ পাল ও শুভেন্দু ভট্টাচার্য, কলকাতা: জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিস্ফোরক রিপোর্টের প্রেক্ষিতে আইনি পরামর্শ নিচ্ছে রাজ্য। সূত্রের দাবি, রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। রিপোর্টে কুখ্যাত দুষ্কৃতীদের তালিকায় যাঁদের রাখা হয়েছে, তাঁদের দিয়ে মানহানির মামলা করানোরও ভাবনা আছে বলে সূত্রের খবর। এই ইস্যুতে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সংঘাত সপ্তমে।


ভোট পরবর্তী অশান্তির প্রেক্ষাপটে প্রকাশ্যে এসেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিস্ফোরক রিপোর্ট। হাইকোর্টে জমা দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজ্যে আইনের শাসন নেই, আছে শাসকের আইন। পুলিশ-রাজনীতিবিদ ক্ষতিকারক আঁতাঁতের অভিযোগ করে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে। শুধু তাই নয় - রিপোর্টে তৃণমূলের একাধিক হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ককে কুখ্যাত দুষ্কৃতীদের তালিকায় রেখেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। 


সূত্রের খবর, মানবাধিকার কমিশনের এই রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করা হতে পারে রাজ্যের তরফে।প্রয়োজনে যাওয়া হতে পারে সুপ্রিম কোর্টেও। সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে আইনি পরামর্শ নিচ্ছে রাজ্য সরকার।


এ ব্যাপারে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কটাক্ষ, সুপ্রিম কোর্টে যাবে! যাক না! যতদূর যেতে হয় যাব। একবার ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে, মুখ পুড়েছে। আমরা চাই সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করুক।


বিধানসভার উপ মুখ্যসচেতক ও তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় বলেছেন, বিজেপিকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে, এখন আর এগুলোর কোনও প্রভাব পড়বে না।


জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে 'কুখ্যাত দুষ্কৃতী'দের তালিকায় একাধিক হেভিওয়েট তৃণমূল নেতার নাম আছে। তার মধ্যে অন্যতম, রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, নৈহাটির তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিক, দিনহাটার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ,ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা। 


পার্থ ভৌমিক বলেছেন, সবাই জানে আমি কে, দলের লোকেরাও জানেন, অন্য দলের লোকেরাও জানেন।সূত্রের খবর, মানবাধিকার কমিশনের এই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে, যাঁদের নাম কুখ্যাতদের তালিকায় রাখা হয়েছে, তাঁদের দিয়ে মানহানির মামলা করানোর সম্ভাবনা আছে। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছেন, দল যদি চায়, আমি মানহানির মামলা করব হিউম্যান রাইটসের বিরুদ্ধে। প্রত্যেকটা কমিশনের সদস্যকে হাইকোর্টে টেনে আনব। আমার নামে রাজ্যের কোনও থানায় অভিযোগ নেই।


উদয়ন গুহ  বলেছেন, দল যদি চায়, আমি মানহানির মামলা করতে প্রস্তুত। কমিশন কি এভাবে কাউকে কুখ্যাত দুষ্কৃতী তকমা দিতে পারে?


শওকত মোল্লা  বলেছেন, দলের সঙ্গে আলোচনা করেছি, দল যা বলবে, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব। মানবাধিকার কমিশনের লোকজন বিজেপির পৃষ্ঠপোষকতা করতে এসেছিল।


তবে তৃণমূল নেতারা যাই পদক্ষেপ নিন না কেন, তাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপি। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, যে কেউ যেখানে হোক যেতেই পারে। মানবাধিকার কমিশন তার কাজ করেছে। 


শনিবার, মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয় নবান্নে। ছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি, এডিজি আইনশৃঙ্খলা-সহ শীর্ষ পুলিশ আধিকারিকরা। নবান্ন সূত্রের খবর, কমিশনের রিপোর্ট তিন ভাগে ভাগ করে বিশ্লেষণ করা হয়।প্রথমে আলোচনা হয়, আদর্শ আচরণ বিধি বলবৎ থাকার সময়ে হওয়া হিংসার ঘটনা নিয়ে।দ্বিতীয় ধাপে আলোচনা হয়, ২মে ভোটের ফল ঘোষণা থেকে ৫ মে মুখ্যমন্ত্রীর শপথগ্রহণের দিন অবধি হওয়া অশান্তির ঘটনা নিয়ে।এরপর ৬ মে থেকে সাম্প্রতিক অশান্তির ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয় তৃতীয় ধাপে।