হরিণঘাটা:  কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া এবার দেখা গেল নদিয়ার হরণিঘাটা পুরসভার অন্তর্গত সিমহাটে। ন’ মাস আগে মৃত্যু হয়েছিল মা ননীবালা সাহার। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর কাউকে কিছু না জানিয়ে ন’ মাস ধরে সেই দেহ আগলে রেখে দিয়েছিল দুই ছেলে অরুণ সাহা ও অজিত সাহা। রবিবার দুপুরে আচমকা এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। তারপরই এলাকায় পুলিশ এসে উদ্ধার করে একটি নরকঙ্কাল।


পুলিশি জেরায় দুই ছেলে অরুণ ও অজিত সাহা জানিয়েছেন, তাঁদের মা ৮৫ বছর বয়সি ননীবালা এই বছর ১৬ জানুয়ারি মারা যান। সেসময় মারাত্মক ঠাণ্ডা থাকায় তাঁরা ভাবেন কয়েকদিন পর দাহ করবেন। তাঁদের আরও দাবি তাঁদের দুই ভাইয়ের একজনের দাঁতে ও আরেকজনের পায়ে ব্যাথা ছিল। তাই তাঁদের পক্ষে দেহ নিয়ে গিয়ে দাহ করা সম্ভব ছিল না। দিন কয়েক বাদে তাঁরা দেখেন তাঁদের মায়ের দেহে পোকা ধরে গেছে। তখন তাঁরা কাউকে কিছু না জানিয়ে, ঘরের মধ্যেই রেখে দেন সেই দেহ। পাড়া-প্রতিবেশীরা তাঁদের কাছে মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলে, তাঁরা বলতেন মা ভাল আছে। তবে অসুস্থ, তাই ঘুমিয়ে রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে এক কথা বলায় প্রতিবেশীদের মনে সন্দেহ জাগে।

দিন কয়েক আগে ওই এলাকারই স্থানীয় বাসিন্দা রূপক অধিকারী হরিণঘাটা পুরসভার হয়ে ওই বাড়িতে একটি সমীক্ষায় যান। তারজন্যে তাঁর বাড়ির মাপ নেওয়ার ও ভেতরে যাওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তাঁকে কিছুতেই ঘরের ভেতর যাওয়ার অনুমতি দেননি দুই ভাই। তখনই সন্দেহ জাগে ওই ব্যক্তির মনে। তারপর তিনি পরিকল্পনা করে ছজনের একটি দল গঠন করে রবিবার সকালে ওই বাড়িতে যান তাঁরা। তখনও একইভাবে বাধা দেন দুই ভাই। তারপর আরও বড় একটি দল তৈরি করে, জোর করে বাড়ির ভিতর ঢুকে যান। স্যাঁতস্যাঁতে, অন্ধকার, নোঙরা ঘরের মধ্যে ঢুকে তাঁরা খাটের ওপর কম্বল চাপা নরকঙ্কালটি দেখে চমকে যান। তারপরই পুলিশে খবর দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, বাড়িটি একটি বিশাল জমির ওপর, মূল রাস্তার থেকে অনেকটা ভেতরে। সেইজন্যেই হয়তো লোকের কাছে দেহ থেকে পচনের গন্ধ নাকে এসে পৌঁছয়নি, অনুমান পুলিশের।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ননীবালাদেবীর স্বামী কুঞ্জমোহন সাহা বেঙ্গল কেমিক্যালে চাকরি করতেন। বছর কুড়ি আগে মৃত্যু হয় তাঁর। বাড়ির উঠোনে তিনি আর একটি পাকা বাড়ির ভিত করে গিয়েছিলেন। যদিও সেই বাড়ি অসমাপ্ত অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে। অরুণবাবু বিএসসি পাশ করে চাকরি পাননি। এলাকায় টিউশন পড়াতেন। পাড়ায় তাঁর অসংখ্য ছাত্র ছিল। কিন্তু গত দশ বছর সেসবও ছেড়ে দেন অরুণবাবু। ছোট ভাই অজিত কোনও কাজকর্ম করতেন না।

থানায় এনে দু’জনকে ভাত খাওয়ায় পুলিশ। তারপর শুরু হয় জেরা। পুলিশের দাবি দুই ভাইয়ের মানসিক সমস্যা রয়েছে।