কলকাতা: দলের তরফে কড়া বার্তার পরেও বঙ্গভঙ্গ-মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক জিইয়ে রাখলেন জন বার্লা। বাংলা-ভাগের দাবিতে তাঁর মন্তব্য নিয়ে যুক্তি দিলেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ। জন বার্লার দাবি, সম্প্রতি কুমারগ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রধান, উপ প্রধান, জেলা পরিষদের সদস্যা-সহ ৯ জন তাঁর বাড়িতে আশ্রয় নেন। বিজেপি সাংসদের অভিযোগ, সকলেই ভোট পরবর্তী হিংসার শিকার। বিজেপিকে ভোট দেওয়ায় ১০০ দিনের কাজ, রেশন-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প থেকে কর্মী-সমর্থকদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। থানায় জানালেও বিজেপি নেতা-কর্মীদের সাহায্য করা হচ্ছে না বলে সাংসদের অভিযোগ। জন বার্লার দাবি, তিনি বিষয়টি নিয়ে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হবেন। এধরনের ঘটনার প্রেক্ষিতেই তাঁর বঙ্গভঙ্গের দাবি বলে যুক্তি দিয়েছেন বিজেপি সাংসদ। যদিও পুলিশের তরফে অসহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। এখনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি তৃণমূলের। 
আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ কয়েকদিন আগেই বলেছিলেন, আলাদা রাজ্য হলেও ভাল, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হলেও ভাল। বিজেপি যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ সৌমিত্রা খাঁ, জঙ্গলমহল রাজ্যের দাবি করেছিলেন। এক বিজেপি সাংসদ চাইছেন পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্য। অপর বিজেপি সাংসদ দাবি করছেন আলাদা জঙ্গলমহল রাজ্যের। যা নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে বঙ্গভঙ্গের অভিযোগে সরব তৃণমূল। এ ধরনের ঘটনা নিয়ে কড়া মনোভাব দেখিয়েছেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
সূত্রের দাবি, মঙ্গলবার বিজেপি মিডিয়া সেলের বৈঠকে সদস্যদের একাংশ দিলীপ ঘোষের কাছে অভিযোগ করেন, জন বার্লা ও সৌমিত্র খাঁ যেভাবে আলাদা রাজ্যের দাবিতে সরব হয়েছেন, তাতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতি হচ্ছে। দুই সাংসদকে সতর্ক করার দাবি জানানো হয়।
এরপরই দিলীপ ঘোষ অত্যন্ত কড়াভাবে এই ইস্যুতে দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করে দেন। তিনি বলেন, “আলাদা রাজ্যের মত একান্ত ব্যক্তিগত। পশ্চিমবঙ্গ  ভাগ হবে না, এটা দলের মত। পার্টিতে থাকতে হলে দলের মত মেনে থাকতে হবে। আর পার্টিলাইন একটাই, পশ্চিমবঙ্গ ভাগ হবে না।”
এরইসঙ্গে পৃথক রাজ্যের দাবি জানানো নেতাদের পরোক্ষে খোঁচাও দেন তিনি।  বলেন, যাঁরা এ দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা বিভিন্ন দল থেকে বিজেপিতে এসেছে। বিজেপি এক রাজ্যের পক্ষেই সওয়াল করে।
দিলীপ ঘোষের কড়া অবস্থানের পর সৌমিত্র খাঁর সুরও নরম করেন।বিষ্ণুপুরের সাংসদ বলেন,এটা দলের বক্তব্য নয়, ব্যক্তিগত মত, যা বলেছি তা এলাকার মানুষের ক্ষোভ, বিক্ষোভের প্রতিধ্বনি। দলকে এই নিয়ে ব্যাখ্যা দেব। 
আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ যখন পৃথক রাজ্যের দাবি তুলছেন, তখন বর্তমানে তৃণমূল ঘেষা গুরুংপন্থী মোর্চার মুখে ফের উঠে এসেছে গোর্খাল্যান্ড প্রসঙ্গ। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (গুরুঙ্গপন্থী) সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেছেন, আগে গোর্খাল্যান্ডের রাজনৈতিক সমাধান হোক।
পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, জঙ্গলমহল, পাহাড়ের মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। বিজেপি বিভ্রান্ত সৃষ্টি করে। এই চেষ্টা ফলপ্রসূ হবে না। 
শেষ অবধি পৃথক রাজ্যের দাবি ঘিরে এই বিতর্কের শেষ কবে হয়, সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।