অভিজিৎ চৌধুরি, মালদা: দলের নেতা দুর্নীতিগ্রস্থ। চাকরি দেওয়ার নাম করে বেকার যুবকদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। আর তাকেই অঞ্চল সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে! নজিরবিহীনভাবে রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলল শাসকদল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত। ওই নেতাকে অঞ্চল সভাপতি করা হলে গোটা পঞ্চায়েত তৃনমূল ছাড়বে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে।


মালদার হরিশচন্দ্রপুর-১ ব্লকের তুলসিহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা। গ্রাম পঞ্চায়েত কতৃপক্ষের দাবি,  তুলসিহাটা অঞ্চল সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মনোজ রামকে। দলের তরফে ঘোষণা করা না হলেও তারা নেতৃত্বের মারফত তা জানতে পেরেছেন। মনোজ রামের একাধিক দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে কয়েকমাস ধরে একাধিকবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা জানানোও হয়েছিল বলেও দাবি গ্রাম পঞ্চায়েত কতৃপক্ষের। তারপরেও তাকেই ফের মনোজ রামকেই কেন অঞ্চল সভাপতি করা হল সেই প্রশ্ন তুলে ক্ষুব্ধ শাসকদলের প্রধান,  উপপ্রধান থেকে শুরু করে বাকি সব সদস্যই।

নির্বাচনের মুখে দলের নেতার বিরুদ্ধে শাসকদলের গোটা গ্রাম পঞ্চায়েতের এহেন নজিরবিহীন প্রতিবাদ-বিক্ষোভে অস্বস্তিতে পড়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। আর এমন ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবেই কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা। ১৭ আসনের তুলসিহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল ৪,  বিজেপি ৬ ও বাম-কংগ্রেসের ৭টি আসন পেয়েছিল। কিন্তু বিজেপি বাদে সকলেই পরে শাসকদলে যোগ দেওয়ায় বোর্ড গড়ে তৃণমূল! প্রধান হন শকুন্তলা সিংহ ও উপপ্রধান হন মহবা বিবি। এর আগে তুলসিহাটা অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন মনোজ রাম। জেলায় সব কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর ফের নতুন কমিটি তৈরি হয়েছে। তুলসিহাটায় ফের মনোজকে সভাপতি করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে তারা জানতে পেরেছেন।

পঞ্চায়েতের অভিযোগ,  মনোজের মতো দুর্নীতিগ্রস্থ নেতা এলাকায় আর কেউ নেই। পঞ্চায়েতের পাশাপাশি স্থানীয় নেতৃত্বের তরফে মনোজকে সভাপতি যাতে না করা হয় তা জানানো হয়েছিল। মনোজ বাদে যে কাউকে তারা মেনে নেবেন বলেও নেতৃত্বকে জানানো হয়েছিল! তারপরেও মনোজকে সভাপতি করা হয়েছে জানতে পেরে কার্য়ত বিদ্রোহ শুরু করেছেন তারা।

প্রধান শকুন্তলা সিংহ বলেন, 'মনোজের জন্য এলাকার মানুষ তৃণমূলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ও অনেকের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়েছে। সামনেই নির্বাচন। কীভাবে এই অবস্থায় মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাব। তাই ও পদে থাকলে আমরা পঞ্চায়েতকে নির্দল ঘোষণা করে দেব। নির্দল হয়েই ভোটে মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাব।' উপপ্রধান মহবা বিবির স্বামী আব্বাস আলী বলেন,  'ও থাকলে কেউ ভোট দেবে না। এত অভিযোগ থাকা সত্বেও ওকে অঞ্চল সভাপতি কেন করা হল বুঝতে পারছি না।'

যদিও মনোজ রামের দাবি, 'চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। আর ওরা যা বলছেন তা দলবিরোধী কথা। সমস্যা থাকলে সেটা দলকে জানাক। দল যে ব্যবস্থা নিবে তা মাথা পেতে নেব।'

তৃণমূলের জেলার কো-অর্ডিনেটর হেমন্ত শর্মা এই প্রসঙ্গে বলেন,  'আমরা স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলব! ব্লক নেতৃত্ব সমস্যা না মেটাতে পারলে কীভাবে সমস্যা মেটে তা জেলা নেতৃত্ব দেখবে।'

বিজেপি নেতা অজয় গাঙ্গুলি বলেন,  'নিজের দলের লোকই সভাপতিকে মানতে চাইছেন না। গোষ্ঠী রাজনীতি, দুর্নীতি তৃণমূলে নতুন কিছু নয়। আর এভাবেই ওরা মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছে।'