নন্দীগ্রাম (পূর্ব মেদিনীপুর): কেউ কেউ হিন্দু-মুসলমান করার চেষ্টা করছে। নাম না করে এভাবেই বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


প্রার্থী হওয়ার পর এদিন নন্দীগ্রামে প্রথম কর্মিসভা করেন তৃণমূলনেত্রী। সেখানে তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ হিন্দু-মুসলমান করার চেষ্টা করছে। আমি হিন্দু ঘরের মেয়ে, চণ্ডীপাঠ করে বাড়ি থেকে বের হই। সব ধর্মের মানুষ নিজের ধর্মকে সম্মান করেন। আমায় হিন্দু ধর্ম শেখাচ্ছে? ধর্ম নিয়ে খেলবেন? খেলা হবে? কবে খেলবেন? মুখস্থ করে এসে বুলি আওড়াচ্ছেন।’


নিজের কেন্দ্রের প্রশংসা করে মমতা বলেন, নন্দীগ্রামই শিখিয়েছে সম্প্রীতি। বলেন, ‘মানুষে মানুষে ভাগাভাগি হয় না। নন্দীগ্রামই শিখিয়েছে সম্প্রীতি। সারা বিশ্বে নন্দীগ্রাম পৌঁছে গেছে। নন্দীগ্রামের মানুষের কথা আমি দিল্লিতে পৌঁছে দিয়েছি।’


মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘বহিরাগত’ দাবি করে বিতর্কিত ফ্লেক্স পড়েছে তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র নন্দীগ্রামে। এদিন তাঁর জবাবে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘কেউ কেউ বলছে আমি নাকি বাইরের লোক। ‘আমি বাংলার লোক, বাইরের লোক হলাম কী করে? গুজরাত থেকে যারা আসছে তাঁরা বাংলার লোক?’


 



 


এদিন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের স্মৃতি রোমন্থন করেন তৃণমূলনেত্রী। ফিরে যান ২০০৭ সালে। বলেন, ‘১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে গুলি চলেছিল। অসুস্থ ছিলাম, হাসপাতাল থেকে চলে এসেছিলাম। কোলাঘাটে আমার গাড়ির উপর হামলা, সেদিন কেউ ছিল না। রাজ্যপাল ফোন করে বললেন, আপনাকে পেট্রোল বোমা মারার চক্রান্ত চলছে। আনিসুরের বাইকে লুকিয়ে তমলুক হাসপাতালে যাই। আনিসুর জেলে আছে, কে জেলে ভরেছে, নাম বলব না। সিপিএম ভাবতে পারেনি, আমি স্কুটারে করে পৌঁছে যাব। তারপর চণ্ডীপুর হয়ে নন্দীগ্রামে ঢুকেছিলাম, শুরু হয়েছিল অকথ্য অত্যাচার। ১০ নভেম্বর সূর্যোদয়ের নামে ১০ জনের দেহ লোপাট করা হল। ভাঙাবেড়া থেকে সোনাচূড়া, একই অত্যাচার হয়েছে।’


আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে মমতা জানিয়ে রাখলেন, সেদিনের মতো আজও তিনি সকলের পাশে আছেন। বলেন, ‘সেদিনও আমি আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম, আজও আছি। আপনারা দলের সম্পদ, আপনারা বললে চলে যাব। মনোনয়ন জমা দেব না। কিন্তু আপনারা বললে আমি কাল মনোনয়ন দেব। 


নন্দীগ্রাম থেকে তিনি কেন দাঁড়ালেন, এই প্রশ্নের জবাব দেন মমতা। বলেন, ‘নন্দীগ্রামে আমি কেন দাঁড়ালাম? ভবানীপুর থেকেও তো দাঁড়াতে পারতাম। শেষবার যখন এসেছিলাম সেদিন কথা দিয়েছিলাম। আপনাদের উদ্দীপনা দেখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভুলতে পারি নিজের নাম, ভুলব নাকো নন্দীগ্রাম। সিঙ্গুর না হলে নন্দীগ্রামের আন্দোলনের তুফান আসত না। মাথায় ছিল হয় সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়াব।’


 



 


১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ। আর সেই দফাতেই ভোট হবে নন্দীগ্রামে। যে কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী হচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। বিপক্ষে বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী।


প্রার্থী হওয়ার পর এদিন নন্দীগ্রামে প্রথম কর্মিসভা করেন তৃণমূলনেত্রী। সেখানে তিনি হুঙ্কার দিয়ে রাখলেন, ১ এপ্রিল খেলা হবে। মমতা বলেন, ‘নন্দীগ্রামে বাড়ি ভাড়া নিয়েছি, পরে কুঁড়ে ঘর বানিয়ে নেব। আমি যা কথা দিই, তা রাখি। ১ এপ্রিল খেলা হবে।’ তিনি যোগ করেন, পুরনো অত্যাচারী অনেক সিপিএম নন্দীগ্রামে ফিরেছে। লক্ষ্মণ শেঠের সঙ্গীদের নিয়ে অত্যাচার করেছিল, তারা ঢুকছে। শিব চতুর্দশীর দিন তৃণমূলের ইস্তেহার প্রকাশ হবে।’


তিনি মনে করিয়ে দেন, ‘হাসপাতাল-কলেজ থেকে জলপ্রকল্প, সব করে দিয়েছি।’ তাঁর প্রতিশ্রুতি, আগামীদিনে নন্দীগ্রামকে মডেল করে দেব। নানারকম চক্রান্ত চলবে, চক্রান্তে পা দেবেন না।’