সমিত সেনগুপ্ত: এই মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতিতে যে নামগুলো বহুচর্চিত, তার মধ্যে অন্যতম অবশ্যই শুভেন্দু অধিকারী ও বাবুল সুপ্রিয়। উত্তর থেকে দক্ষিণ -- রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিজেপির পক্ষে প্রচারের ঝড় তুলেছে মধ্যবয়সী এই দুই নেতা।
বিজেপি দলে এটা কারও অজানা নয় যে, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সু-নজরে রয়েছেন এই দুই নেতা। গত ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে এসে এই মাসকয়েকের মধ্যেই দলের প্রচারে নজর কেড়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।
আবার বিজেপির হয়ে ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে প্রথমবারেই জিতে শুরু থেকেই নেতৃত্বের সুনজরে বাবুল সুপ্রিয়। কেউ কেউ মজা করে বলেন, বাবুল নাকি আবার প্রধানমন্ত্রীর 'ব্লু আইড বয়'।
দলে যোগদান করেই একেবারে কোর কমিটিতে জায়গা করে নিয়েছেন শুভেন্দু। আর বাবুলের প্রাপ্তি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়া। তাও একবার নয় মোদি মন্ত্রিসভার দু'দফাতেই মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়।
বিজেপির নেতারা বলেন যে, এই দলে যে সক্রিয়ভাবে কাজ করবে দল তাকে প্রয়োজনীয় সম্মান দেবে। বর্তমানে বাবুল এবং শুভেন্দু দুজনকেই দল যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দলের কাজে ব্যবহার করেছে।
দলের ভিতরে এবং বাইরে ইতিমধ্যেই এই দুই নেতার বন্ধুত্বের কথা এখন বহুচর্চিত। তবে এই দুই বন্ধু নেতার সবচেয়ে বড় মিল হল, এরা দুজনেই একই বছর একই দিনে জন্মেছেন। -- ১৯৭০ সালের ১৫ ডিসেম্বর।
গত ৫০ বছর ধরে শুভেন্দু এবং বাবুল দুজনেই ছিলেন দুপ্রান্তে। বাবুলের জন্ম হুগলিতে আর শুভ্যেন্দুর অবিভক্ত মেদিনীপুরে। ব্যাঙ্কের চাকরি তারপর মুম্বাইতে গায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, সবশেষে নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ বাবুল সুপ্রিয়র।
তবে শুভেন্দু অধিকারী ছাত্রাবস্থা থেকেই লক্ষ্য স্থির রেখে রাজনীতিতে একপা একপা করে সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে উঠেছেন।একজন কেন্দ্রের মন্ত্রী তো অন্যজন রাজ্য রাজনীতির দাপুটে নেতা।
এই দুজনের মুখোমুখি প্রথম সাক্ষাৎ ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে জেতার পরে সংসদে। তখন রাজনীতিতেও এরা দুজনেই দুই মেরুর লোক হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন। সহকর্মী থেকে বন্ধুত্বের আত্মপ্রকাশ।
তবে এই বন্ধুত্ব আরও মজবুত হয় ১৯ ডিসেম্বরের পর থেকে। শুভেন্দু যোগদান করলেন বিজেপিতে, আর তারপর থেকে দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশে এই দুই নেতাকে একসঙ্গে একাধিক কর্মসূচিতে দেখাও যাচ্ছে।
কখনও উত্তর ২৪ পরগনা তো কখনও মেদিনীপুর, কখনও আবার দক্ষিণের জয়নগর। কখনও রোড শো কখনও মিছিল কখনও মিটিং। একাধিক জায়গায় একসঙ্গে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন দুজনে।
রবিবার ব্রিগেডের মঞ্চে ভিড় করেছিল বিজেপির একাধিক নেতা। কিন্তু কর্মসূচির পরে শুধুমাত্র বাবুল ও শুভেন্দুকে দেখা গেল একসঙ্গে ময়দান ছাড়তে। গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বাবুল, কো-প্যাসেঞ্জারের আসনে শুভেন্দু।
দ্বিতীয় হুগলি সেতু টপকে গাড়ি পৌঁছল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হাওড়ার বাড়িতে। নবান্নের কাছেই একটি কমপ্লেক্সে ১৭ তলায় থাকেন বাবুল। সূত্রের খবর, ভোটমুখী বাংলায় নিজেদের প্রচার রণকৌশল তৈরি করতে দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন বিজেপির এই দুই স্টার প্রচারক।
বৈঠক শেষে শুভেন্দু অধিকারীকে বৈঠক প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, " আমরা দুজন বন্ধু। একই দিনে আমরা জন্মেছি। বয়সও একই। তাই বাবুলের বাড়ি আসা।" আর বাবুল বললেন,"১৯৭০ এর ১৫ ডিসেম্বর একই দিনে দুজনে জন্মেছি। এটা কাকতালীয় হলেও, আমরা এখন ভারতীয় জনতা পার্টির সৈনিক। দুজনের পাখির চোখ প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করা। তাই একসঙ্গে কিছু আলোচনা সেরে নিলাম।"
মজার বিষয় হলো, আলাপের প্রথম দিন থেকেই দুজন দুজনকে ' আপনি ' সম্বোধন করেন। দুজনে যে কাকতালীয়ভাবে সমবয়সী সেটা জানার পরেও 'আপনি' সম্বোধনের পরিবর্তন হয়নি।