কলকাতা: রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের যেন হিড়িক পড়েছিল। শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অনেক তৃণমূল নেতাই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। দলবদলে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেককেই প্রার্থী করেছিল বিজেপি। কিন্তু ভোটের ফলাফলে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। ২১৩ আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছে তৃণমূল। অন্যদিকে,২০০-র বেশি আসন নিয়ে বিজেপির ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন সফল হয়নি। ভোটের পরই বেশ কয়েকজন নেতা বিজেপি ছে়ড়ে তৃণমূলে ফেরার কথা বলেছেন। আবার শুভ্রাংশু রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো কোনও কোনও নেতা বেসুরো গাইছেন। 


বিজেপির অন্দরে ইদানীং এই যে উল্টো সুর শোনা যাচ্ছে, তা নিয়ে নিউটাউনে চা-চক্রে মুখ খুললেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।  তাঁর কটাক্ষ, বিজেপির উত্থানে যাঁদের যোগ নেই, তাঁরাই মন খারাপ করে বসে আছে। তিনি জানান, দলের সঙ্গে যদি কেউ সুর মেলাতে না পারে, তাহলে সেটা ওই ব্যক্তির সমস্যা, দলের নয়।  এই প্রসঙ্গেই তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে পুলিশ দিয়ে, গুন্ডা দিয়ে বিজেপি নেতাদের ভয় দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন।


উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন,  কথায় কথায় দিল্লি আর ৩৫৬ ধারার জুজু দেখালে বাংলার মানুষ ভালভাবে নেবে না।শুভ্রাংশু রায় ফেসবুক পোস্টে বলেছিলেন,রাজ্য সরকারের সমালোচনার আগে আত্মসমালোচনা বেশি প্রয়োজন।


বিধানসভা ভোটে ধরাশায়ী হওয়ার পর, বিজেপির অন্দরের ক্ষোভ চলে এসেছে প্রকাশ্যে। বিজেপি নেতৃত্বকে কাঠগড়ায় তুলে, সোশাল মিডিয়া বা সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। দলীয় নেতাদের একাংশের এই প্রবণতায় রাশ টানতে বুধবার শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি গড়ে রাজ্য বিজেপি। যার চেয়ারম্যান করা হয় বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকারকে।কমিটির দুই সদস্য হলেন বিশ্বপ্রিয় মজুমদার ও রথীন্দ্রনাথ বসু।দলে শৃঙ্খলা আনতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে বিজেপি। দলের রাজ্য সম্পাদক সায়ন্তন বসু জানিয়েছেন, সাম্প্রতিককালে এটা দলে বেড়েছে, শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি নজরদারি করবে গোটা রাজ্যজুড়ে। প্রয়োজন মনে করলে কড়া ব্যবস্থা নেবে। বহিষ্কারের সুপারিশ হলে তা দেখবেন সভাপতি।


বিজেপির নতুন কমিটি নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে তৃণমূল। মন্ত্রী পুলক রায়ের কটাক্ষ, যে দল নিজেদের নেতাদের উপর নজরদারি চালায় সেটা আর দল নাকি মিউজিক্যাল পার্টি, দিলীপ ঘোষরা নিজেদের হাসির খোরাক  করে চলছেন।প্রার্থী হতে না পেরে ভোটের আগেও বিজেপির অন্দরে জোরাল হয়েছিল ক্ষোভ। ভোটের পর আরও তীব্র হয়েছে ক্ষোভ। একের পর নেতা বেসুরো হওয়ার পাশাপাশি চুঁচুড়া, আসানসোলে দলেরই বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন খোদ দিলীপ ঘোষ। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির পদক্ষেপ নিয়ে বাড়ছে কৌতুহল।