বিজেন্দ্র সিংহ, নয়াদিল্লি: ৫ নভেম্বরের মধ্যে কোনও এক বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জিতে আসতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।  তাই রাজ্যের পাঁচ বিধানসভা কেন্দ্রে দ্রুত উপনির্বাচন ও দুই বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট চাইছে তৃণমূল। 


এনিয়ে দরবার করতে আজ দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনে যাচ্ছে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। যাওয়ার কথা ছিল শুক্রবার। কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে উপনির্বাচনের গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে একদিবন আগে, অর্থাৎ, আজই কমিশনের দ্বারস্থ হতে চলেছে তৃণমূলের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল। 


৫ জনের প্রতিনিধিদলে রয়েছেন সৌগত রায়, সুখেন্দুশেখর রায়, মহুয়া মৈত্র, জহর সরকার ও সাজদা বেগম। দুপুর সোয়া ৩টে নাগাদ নির্বাচন কমিশনে যাবে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। সূত্রের খবর, রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া পুরোপুরি কোভিড বিধি মেনে হবে, কমিশনের কাছে এমনই দাবি করবে তৃণমূল।


রাজ্যের যে পাঁচ বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে সেগুলি হল -- নদিয়ার শান্তিপুর, কোচবিহারের দিনহাটা, দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর, উত্তর ২৪ পরগনার খড়দা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা। এছাড়াও নির্বাচনের আগে প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায়, ভোট বাকি রয়েছে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুর বিধানসভা কেন্দ্রে।


এই সাত কেন্দ্রে দ্রুত ভোটের দাবিতে, এর আগে ১৫ জুলাই জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয় তৃণমূল। ৬ অগাস্ট, রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছেও একই দাবি জানিয়েছে তারা। কিন্তু এখনও রাজ্যের উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়নি। তাই ফের কমিশনের দ্বারস্থ হতে চাইছে তৃণমূল। 


এই প্রেক্ষিতে এদিন দিলীপ ঘোষ বলেন, বিদ্যালয় থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু বন্ধ রাজ্যে। কিন্তু উনি উপনির্বাচন চাইছেন। এতগুলো পুরসভার নির্বাচন বকেয়া মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারছ না। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে উপনির্বাচন চাইছেন। 


বিজেপি রাজ্য সভাপতির কটাক্ষ, নির্বাচন কমিশনে ওনারা প্রত্যেক সপ্তাহে দেখা করেন। চা খেয়ে চলে আসেন। উপনির্বাচন হবে না বলে নৈতিকতার কারণে পদত্যাগ করেছেন আমাদের একজন মুখ্যমন্ত্রী। উনিও সরে গিয়ে দেখান না। এরা ক্ষমতা ছাড়তে চায় না।


এর আগে করোনা আবহে উপনির্বাচন করা নিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। ৩০ অগাস্টের মধ্যে এই মতামত জানানোর কথা। একইসঙ্গে প্রচার নিয়ে কমিশনের মহামারী সংক্রান্ত গাইডলাইন নিয়েও মতামত চেয়ে পাঠানো হয়।


সূত্রের খবর, তৃণমূল নির্বাচনের পক্ষপাতী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই বলেছেন, রাজ্যে ভোটের পরিস্থিতি রয়েছে। আমরা চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উপ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করুক কমিশন।


যদিও বিজেপি এখনই ভোট চাইছে না। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আগে বলেছিলেন, যারা রাজ্যে গত ৪ বছরে একের পর এক ভোট করাতে পারেনি, তারা এখন তাড়াহুড়ো করছে কেন? ভ্যাকসিনেশন সম্পূর্ণ না হলে আমরা উপনির্বাচনের পক্ষপাতি নই।


নির্বাচন আটকাতে রাজ্য বিজেপি যে মরিয়া, তা স্পষ্ট। বিজেপি নেতা তথাগত রায় ট্যুইট করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ, দুই-ই বাড়ল! লোকাল ট্রেন বন্ধ, স্কুল কলেজও তাই। ভ্যাকসিন নিয়ে টানাটানি অব্যাহত। এক কথায়, একটা থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে উপনির্বাচন কী করে হবে? না না, এই অবস্থাতে কোনও ঝুঁকি নেওয়া মোটেই উচিত নয়।


এছাড়া, গত দুদিন ধরে কেন্দ্রীয় নেতা শিবপ্রকাশের উপস্থিতিতে কলকাতায় রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের সাংগঠনিক বৈঠক চলছে। সূত্রের খবর, বৈঠকের পর চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বঙ্গ বিজেপি জানিয়েছে -- এই মুহূর্তে রাজ্যে নির্বাচনের পরিস্থিতি নেই। করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যে বন্ধ লোকাল ট্রেন, কম যাত্রী নিয়ে চলছে বাস। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে পুজোর মাসেই করোনার তৃতীয় ঢেউয় আছড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। করোনা বিধি দেখিয়ে বিজেপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে রাজ্য সরকার। এই মুহূর্তে ভোট না হলেও, সঙ্কটে পড়বে না রাজ্য সরকার।