উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, ঋত্বিক মণ্ডল ও অর্ণব মুখোপাধ্যায়, বহরমপুর : বহরমপুর মাতৃসদন! কয়েকশো মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে। কারও জ্বর, কারোর কাশি! কিন্তু, পরীক্ষা করাবেন কী করে? ১২ দিনের আগে করোনা পরীক্ষার ডেটই পাচ্ছেন না কোনও রোগী!
রাজ্যে যখন হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, ঠিক তখনই রাজ্যের জেলায় জেলায় করোনা পরীক্ষার এই চিত্র। গায়ে জ্বর। অবস শরীর। স্বাদ-গন্ধ নেই। অথচ পরীক্ষা করার উপায় নেই। অন্যদিকে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট না পাওয়া গেলে হাসপাতালে ভর্তি করারও জো নেই। অতএব এই উপসর্গ নিয়েই বাড়িতে থাকছেন মানুষ। যদি তিনি করোনা সংক্রমিত হয়ে থাকেন, তাহলে তার মারফত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে পরিবারের বাকিদের মধ্যেও। অথচ উপায় নেই কিছুই।
টেস্টের ডেট পেতেই লেগে যাচ্ছে ১২ দিন! রিপোর্ট পেতে আরও দু-তিন দিন! এই দীর্ঘ সময় রোগী কীভাবে সতর্কতা অবলম্বন করবেন?
কোনও সদুত্তর নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার অমিয় বেরা জানালেন, '' সবার তো টেস্ট করার দরকার নেই, যাদের প্রয়োজন তাদের টেস্টের কথা বলছেন ডাক্তার, অযথা ভয় পাবেন না''
বহরমপুরে যখন কোভিড পরীক্ষার ডেটই পাচ্ছেন না রোগীরা, তখন খাস কলকাতায় করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে গিয়ে জুতোর শুকতলা খুইয়ে ফেলেছেন রোগীর পরিজনেরা।
বৈষ্ণবঘাটার বছর পঁয়ত্রিশের এক মহিলা। ১৭ এপ্রিল পরীক্ষা করান কলকাতা পুরসভার ১০ নম্বর বরোর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তারপর থেকে এক সপ্তাহ হতে চললেও, এখনও রিপোর্ট পাননি। সতকর্তাবশত আপাতত হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ইনি। তাঁর বাড়ির লোক জানালেন, '' আমরা গেলাম পরীক্ষা করাতে গত সপ্তাহে, আশ্চর্যের বিষয় ডাক্তার বলছেন কবে আসবেন জানি না, বলেন এসএসকেএমে পাঠিয়েছি''
কেউ টেস্টের ডেটই পাচ্ছেন না! আবার কারোর রিপোর্ট পেতে বিলম্ব হচ্ছে! এই পরিস্থিতিতে RTPCR টেস্টের রিপোর্ট পেতে যাতে দ্রুত হাতে আসে, তার জন্য নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার।
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, মুখ্যসচিবর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে ভার্চুয়ালে, যাতে ২৪ ঘণ্টায় রিপোর্ট আসে তার জন্য বলা হয়েছে।
সব মিলিয়ে টেস্ট করাতে গিয়ে কিংবা করোনা টেস্টের রিপোর্ট পেতেই যদি এভাবে হয়রানি চলতে থাকে, তাহলে করোনা মোকাবিলা কীভাবে সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।