কলকাতা: রাজ্যে ফের বাড়ল ‘কার্যত লকডাউন’-এর মেয়াদ। নবান্ন থেকে দেওয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, করোনা আবহে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকছে বিধিনিষেধ। বন্ধই থাকছে লোকাল ট্রেন। তবে ছাড়া দেওয়া হয়েছে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার কোচিং সেন্টারগুলিকে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ৫০ শতাংশ পড়ুয়া নিয়ে করোনার বিধি মেনে খোলা যাবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি।বাজার-হাট খোলার ক্ষেত্রে আগের নিয়মই বজায় থাকবে।


স্বাস্থ্য দফতরের শনিবারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজ্যে একদিনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬১ জন, মৃত্যু হয়েছে, ৭জনের। শুক্রবার আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০৩, মৃতের সংখ্যা ছিল ৮। বৃহস্পতিবারে পরিসংখ্যান অনুযায়ী আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭১৭ এবং মৃত্যু হয়েছিল ৯ জনের। দৈনিক সংক্রমণে শীর্ষে কলকাতা। এই পরিস্থিতিতে এদিনও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পুজোর পরে স্কুল খোলার ভাবনা রয়েছে সরকারের।


করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের রেশ এখনও কাটেনি। তার মধ্যেই আতঙ্ক বাড়াচ্ছে তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা।এরই মধ্যে এগিয়ে আসছে উৎসবের মরশুম।সামনেই জন্মাষ্টমী, আসছে গণেশ চতুর্থী। এই প্রেক্ষিতে শনিবার সব রাজ্যের মুখ্যসচিবদের কাছে নতুন নির্দেশিকা পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।তাতে জানানো হয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে করোনা সংক্রান্ত গাইডলাইন বলবৎ থাকবে।রাজ্যকে দেওয়া চিঠিতে স্থানীয় স্তরে সংক্রমণ রুখতে কনটেনমেন্ট জোন গঠনে জোর দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা।


এদিন নবান্নের  নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, রাত ১১ টা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত গাড়ি ও সাধারণ মানুষের বাইরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বহালই থাকছে।  স্বাস্থ্য, আইনশৃঙ্খলা ও কৃষিসামগ্রী সহ অন্যান্য অত্যাবশ্যক সামগ্রী ও অন্যান্য জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে ছাড় থাকছে।


এর আগে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে গত ১২ অগাস্ট  জানানো হয়েছিল যে, ৩০ অগাস্ট পর্যন্ত বহাল থাকছে বিধিনিষেধ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, আপাতত বন্ধই থাকছে লোকাল ট্রেন। এর পাশাপাশি রাজ্যে জারি থাকবে বিধি-নিষেধও।


লোকাল ট্রেন পরিষেবা বন্ধ থাকায় নানারকম অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অফিসে পৌঁছনো হোক বা জরুরি প্রয়োজনে কোথাও যাওয়া, দূরপাল্লার যাত্রীদের ক্ষেত্রে অন্যতম মাধ্যম লোকাল ট্রেন। কিন্তু, সেই পরিষেবা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ বাড়ছে। কিন্তু, লোকাল ট্রেন চালু হয়ে গেলে পুনরায় রাজ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কাও রয়েছে। এদিকে করোনার তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তৃতীয় ঢেউ দেখে নিয়ে লোকাল ট্রেনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যাঁরা কলকাতা আসতে চান, তাঁদের অসুবিধা হচ্ছে জানি। বাস-মেট্রো চালু করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, সেপ্টেম্বরে যেহেতু থার্ড ওয়েভ আসার কথা রয়েছে, তাই আমাদের এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। লোকাল ট্রেনে আসতে পারছেন না বলে অনেকের অসুবিধা হচ্ছে জানি। কিন্তু মানুষের জীবনের থেকে বড় কিছু তো নয়। তাই আরও কয়েকটা দিন কষ্ট করতে হবে।


মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, কলকাতার আশপাশে হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, বর্ধমানের মতো জেলাগুলিতে যদি ৫০ শতাংশও টিকাকরণ করে দেওয়া যায় তাহলে লোকাল ট্রেন চালু করে দেওয়া যাবে। বাস, মেট্রো, অটো, দূরপাল্লার ট্রেন- সবই চলছে। কিন্তু, লোকাল ট্রেনটা আরও কিছুটা সময় নিচ্ছি। কারণ, তৃতীয় ঢেউটা দেখে নিতে হবে। ৩০ অগাস্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরও ১৫ দিন বাড়ানো হল। শনিবার জারি করা নির্দেশিকায় নবান্ন জানিয়েছে,করোনা আবহে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকছে বিধিনিষেধ। তবে ছাড় পাবে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার কোচিং সেন্টারগুলি। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ৫০ শতাংশ পড়ুয়া নিয়ে, করোনার বিধি মেনে খোলা যাবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি।  অর্থাত্‍ বন্ধই থাকছে লোকাল ট্রেন, স্কুল, কলেজ।