সন্দীপ সরকার, আশাবুল হোসেন ও দীপক ঘোষ, কলকাতা: ডেঙ্গি-চিকুনগুনিয়া মোকাবিলায় জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের বরাদ্দ পেল না বাংলা। কেন্দ্রের দাবি, গত ৩ বছর ধরে এই বিষয়ে কোনও তথ্য দেয়নি রাজ্য। তাই অন্য রোগের ক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দ হলেও, ডেঙ্গি-চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে মেলেনি। বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে কেন্দ্র। অভিযোগ তৃণমূলের। তথ্য গোপনের পাল্টা অভিযোগ তুলেছে বিজেপি।
কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের আবহেই এবার ডেঙ্গি-চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে আর্থিক বরাদ্দ ছাঁটাই নিয়ে টানাপোড়েন। যে খাতে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের বাজেটে বরাদ্দই পেল না পশ্চিমবঙ্গ। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে কেন এই বরাদ্দ বন্ধ করল কেন্দ্রীয় সরকার? এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রের দাবি, ২০১৮ সাল থেকে ডেঙ্গি-চিকুনগুনিয়ায় কতজন আক্রান্ত হয়েছেন, কতজনের মৃত্যু হয়েছে, এই সংক্রান্ত কোনও তথ্য সরবরাহ করেনি রাজ্য সরকার।
চলতি অর্থবর্ষে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের যে নথি প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ডেঙ্গি ও চিকুনগুনিয়া খাতে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব নাকচ করা হয়েছে।একই নথিতে দেখা যাচ্ছে, কালাজ্বর, অ্যাকিউট এনসেফ্যালাটিস, জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের মতো রোগ মোকাবিলায় তথ্য সরবরাহ করেছে রাজ্য। সেই বাবদ অর্থ বরাদ্দ হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রকের অন্য এক নথিতে দেখা যাচ্ছে, ডেঙ্গির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার শেষবার তথ্য পাঠিয়েছে ২০১৭ সালে। চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রেও তথ্য সরবরাহ অনিয়মিত। এই ইস্যুতে যথারীতি বেধেছে রাজনৈতিক সংঘাত।
আইএমএ-এর সাধারণ সম্পাদক তথা তৃণমূল সাংসদ শান্তুন সেন বলেন,বৈমাতৃসুলভ আচরণ করছে কেন্দ্র, ভাবা যায় না, তথ্য নেই বলে বরাদ্দ বাতিল করা হচ্ছে, এটা মানা যায় না, মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে কেন্দ্র, কোভিডের সময়ে টিকা না দেওয়া, রেমডেসিভির না পাঠানো, বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্যের সঙ্গে বঞ্চনা করা হচ্ছে, এবার তা ডেঙ্গির ক্ষেত্রেও একই বঞ্চনা।
সংঘাতের আবহে ফের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগে সরব তৃণমূল। পাল্টা জবাব দিয়েছে বিজেপিও। রাজ্য বিজেপি সহ সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ডেঙ্গি- কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়। আমাদের সরকার কখনও বিমাতৃসূলভ আচরণ করে না।
বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেস উপ মুখ্যসচেতক তাপস রায় বলেন, ডেঙ্গি- আর্থিক বঞ্চনা একটা বড় অপরাধ, এটা নানা ভাবে রাজ্যকে বঞ্চনা করা হচ্ছে, আমাদের ন্যায্য পাওনা দিচ্ছে না কেন্দ্র বারবার বলা সত্বেও, কেন্দ্র নানা অজুহাত দিচ্ছে। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, রাজ্য সরকার হিসেব দেয় না, তার মানে ধরে নিতে হয় ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া নেই, সরকার তো ডেঙ্গির তথ্য লুকোনোর চেষ্টা করে, তথ্য গোপন করে, মানুষের জীবন বিপন্ন করছে।
চিকিৎসক মহলের বক্তব্য, নোটিফায়েবেল ডিজিজের ক্ষেত্রে সব রাজ্যকে বাধ্যতামূলকভাবে এই সংক্রান্ত তথ্য কেন্দ্রকে পাঠাতে হয়। কিন্তু, ডেঙ্গি আর চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে তা পাঠানো হয়নি। অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ্ সার্ভিস ডক্টরসের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, একটা নোটিফায়েবেল ডিজিজের ক্ষেত্রে তথ্য দিতে বাধ্য। এই তথ্যগুলো রাজ্য কেন্দ্রকে পাঠাবে। কেন্দ্র আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরবে। এটাই তো নোটিফায়েবেল ডিজিজের মূল উদ্দেশ্য। সেখানে তথ্য পাঠাবো না। একথা বলা যায় না,। আবার একটা তথ্য গেল না বলে রাজ্যকে টাকা দেব না। এটাও মানা যায় না। আলটিমেটলি বিপদে পড়বেন মানুষ।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য ভবন থেকে এই ইস্যুতে সচিব পর্যায়ে কড়া বার্তা পাঠানো হচ্ছে দিল্লিতে।রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, গত বছরও এই খাতে টাকা দেয়নি কেন্দ্র। এই খাতে ৩-৪ কোটি টাকা আসে। আমাদের খরচ হয় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। কেন্দ্র বরাদ্দ না দিলে কোনও অসুবিধা হবে না।