দীপক ঘোষ, কলকাতা: এবারের ভোটে পদ্মফুলের প্রার্থী হতে চান, তবে কাঠের বাক্সে বায়োডাটা জমা করুন। পোশাকি নাম ‘ড্রপ বক্স’। এখন যা আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু। বিজেপির রাজ্য দফতর থেকে জেলা পার্টি অফিস সর্বত্র আলো করে বসে আছেন বাক্স-বাবাজি। প্রতিদিন অগণিত লোক আসছেন পরম আশা বুকে চেপে। জমা করছেন ব্যক্তিগত ঠিকুজি। যদি শিকে ছেঁড়ে, যদি একটা টিকিট জুটে যায়, যদি জনগন মুখ তুলে তাকায়, যদি বিজেপি সরকার গড়ে, এই সব প্রশ্ন মাথায় কিলবিল করছে আর ভরে উঠেছে একটার পর একটা বাক্স। রাজ্য দফতরের সঙ্গে জেলা দফতরের যেন অঘোষিত যুদ্ধ বাক্স ভরো প্রতিযোগিতার। ইতিমধ্যে শুধু রাজ্য দফতেরই প্রায় পঁচিশ হাজার বায়োডাটা জমা পড়েছে। আর জেলা মিলিয়ে? মুখে চিলতে হাসি ঝুলিয়ে কার্যকর্তারা বলেছেন, কয়েক লাখ।


আরও পড়ুন-WB Election 2021: জ্যোতিপ্রিয়র ধমকে তাঁর নামেরই দেওয়াল লিখন ঢাকল কাপড়ে! তরজা উত্তর ২৪ পরগণায়


কয়েক লাখ লোক প্রার্থী হতে ইচ্ছুক, এবার মিলিয়ে দেখুন, এই দলটাই মাত্র ১০ বছর আগে কয়েক লাখ ভোট জোগাড় করতেই হিমশিম খেয়ে যেত। আলাদিনের প্রদীপের মতোই হঠাৎ সব রোদ ঝলমলে হয়ে ওঠে ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের হাত ধরে। বঙ্গে পদ্মের পাপড়ি ৩ শতাংশ থেকে বিস্তৃত হয় ১৪ শতাংশে। কলকাতা শহর এলাকায় দলের ভোট বাড়ে লক্ষণীয় ভাবে। তারপরই দুয়ারে চলে আসে কলকাতা পুর নির্বাচন। এই প্রথম কোনও পুর নির্বাচনকে ঘিরে টিকিট প্রার্থীদের উন্মাদনা দেখে বিস্মিত হয়ে যায় বিজেপি। এক সময় যারা প্রার্থী করার জন্য লোক খুঁজে বেড়াত, তারাই এবার টিকিট প্রত্যাশীদের তাড়াতে ডান্ডা হাতে দাঁড়িয়ে পড়ল পার্টি অফিসের দরজায়। কাউন্সিলার হয়ে যেতে পারি, এই আশায় টিকিটের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল অসংখ্য বিজেপি নেতা-কর্মী। টিকিট বন্টন নিয়ে অসন্তোষ, বিক্ষোভ এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে পার্টি অফিসকে বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে মুক্ত করতে লেঠেল বাহিনীর সাহায্য নিতে হয়েছিল তৎকালীন রাজ্য সভাপতি সভাপতি রাহুল সিনহাকে।


এলো ২০১৬, দল তখন আবার কোনঠাসা। মূল লড়াই বাম-কংগ্রেস বনাম তৃণমূল। সেসময় ২৯৪টি আসনে উপযুক্ত মুখ খুঁজে পাওয়াই মুশকিল ছিল দলের। পরিস্থিতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেল ২০১৯ সালে। বাম-কংগ্রেসকে সরিয়ে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে এল বিজেপি, আবার ভিড় বাড়তে শুরু করলো টিকিট প্রত্যাশীদের। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দরজার লম্বা লাইন, হাতে বায়োডাটা, টিকিট চাই। কাজ করবেন না বায়োডাটা নেবেন? বিরক্ত দিলীপ নির্দেশ দিলেন টিকিট প্রত্যাশীদের নিরাশ না করেও বিকল্প উপায়ে তাদের বায়োডাটা সংগ্রহ করা হোক। এরপরেই ড্রপবক্সের অবতারণা হল রাজ্য দফতরে।


আরও পড়ুন-WB Election 2021 News:  পরিবর্তন যাত্রা ঘিরে ধুন্ধুমার উত্তরপাড়ায়, তৃণমূল-বিজেপি হাতাহাতি


টিকিট খ্যাপাদের শান্ত করতে একদিন আশ্রয় নেওয়া হয়েছিল ড্রপবক্সের, আজ সেই ড্রপবক্সই হয়ে উঠেছে গেরুয়া শিবিরের অন্যতম সহায়ক শক্তি। যারাই টিকিটের জন্য আবেদন করেছেন , সেই লক্ষাধিক মানুষের বায়োডাটায় উল্লেখিত নাম, ঠিকানা এবং ফোন নম্বর সংগ্রহ করেছে বিজেপি। এবার এদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে মাঠে নেমে পড়েছে দল। বলা হচ্ছে, যদি সত্যি তাঁরা বিজেপিকে ভালোবাসেন, তবে তাদের এগিয়ে আসা উচিত এই মহাযুদ্ধে দলের সাফল্য নিশ্চিত করতে। বিজেপি কর্মীরা কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তাদের দলীয় কাজে যুক্ত করার জন্য। তাদের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, এই বিধানসভাই শেষ নয়, আগামীদিনে আরও সুযোগ আসবে। দলের প্রয়োজনে নিজেকে সামিল করে যোগ্য বিজেপি কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার এটাই সুবর্ণ সুযোগ।