কৃষ্ণেন্দু অধিকারী,কলকাতা: ইভিএম-এ কি কারচুপি করা সম্ভব? এক প্রার্থীকে ভোট দিলে তা কি অন্য প্রার্থীর ঝুলিতে যেতে পারে? কোনওভাবেই যে তা সম্ভব নয়, অনেক আগেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তা সত্ত্বেও এ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের আগে ফের উঠেছে এইসব প্রশ্ন।


এই প্রেক্ষিতেই অবসরপ্রাপ্ত আমলা ও বিশিষ্ট জনেরা তৈরি করেছেন একটি রিপোর্ট। শনিবার যা প্রকাশ্যে আনা হবে। সূত্রের খবর, রিপোর্টে বলা হয়েছে, EVM-এর পরিকাঠামোগত রদবদল দরকার। কারণ, দীর্ঘদিন পরেও প্রযুক্তিগতভাবে এই যন্ত্রের কোনও আপডেট হয়নি। প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জহর সরকারের মতে, ‘‘ এই ইভিএমের কোথায় কোথায় সমস্যা... ভাল দিক কোনটা। সব কিছুই এই রিপোর্টে আছে ৷’’


কমিটিতে রয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মদন লোকুর, প্রাক্তন আইএএস ওয়াজাহাত হাবিবুল্লাহ,,মাদ্রাজ হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হরি পরন্থমান, অর্থনীতিবিদ অরুণ কুমার, সমাজকর্মী জন দয়াল, সাংবাদিক পামেলা ফিলিপোস, আইআইটি দিল্লির কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক শুভাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন আইএএস সুন্দর বুরা।


মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়া, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনলোজি-সহ একাধিক নামী প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। পুরো নাম, Electronic Voting Machine। সংক্ষেপে EVM। ছোট্ট এই যন্ত্র এসে সরিয়ে দিয়েছে ব্যালট বাক্সকে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, ১৯৮২ সালে দেশের মধ্যে প্রথম কেরলে ভোটগ্রহণ হয় EVM-এ। এই যন্ত্রের দৌলতে ভোট প্রক্রিয়া যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি সাশ্রয় হয়েছে সময়ের। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে ততই ভিলেন হয়ে উঠেছে এই যন্ত্র।


একের পর এক ভোটে উঠেছে EVM কারচুপির অভিযোগ। সরব হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। অভিযোগের পাহাড় জমেছে নির্বাচন কমিশনে। তদন্তের দাবি ওঠার পাশাপাশি দাবি ওঠে ব্যালট ফেরানোরও। পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামে দেশের নির্বাচন কমিশন। ২০১৭ সালের ৩ জুন EVM হ্যাক করার চ্যালেঞ্জ জানায় তারা। কমিশন দাবি করে, এই যন্ত্র হ্যাক করা কোনওভাবেই সম্ভব নয়।


সম্প্রতি লন্ডনের এক হ্যাকার দাবি করেন, ভারতে ব্যবহার করা EVM সহজেই হ্যাক করে ফেলতে পারেন। সেই দাবিকেও নস্যাৎ করে দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তার পরেও প্রশ্ন থেকে গিয়েছে এই যন্ত্রের স্বচ্ছতা নিয়ে। রাজ্যের বিধানসভা ভোটের আগে সেই সব প্রশ্নই মাথা চাড়া দিচ্ছে আবার। এই প্রেক্ষিতেই প্রকাশ্যে আসছে একটি রিপোর্ট। রিপোর্টটি পাঠানো হবে নির্বাচন কমিশন থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে।