কলকাতা: যে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিরোধীদের কণ্ঠস্বর দমনের অভিযোগ তোলে বিরোধীরা, সেই দলেরই এক বিধায়ক বিরোধী মতাদর্শের বিশ্ববিখ্যাত এক শীর্ষ নেতার মূর্তির আবরণ উন্মোচন করলেন, যা নিয়ে বিস্ময় ছড়িয়েছে।


পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুর পৌরসভার অন্তর্গত ২০ নম্বর ওয়ার্ডে খড়গপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে মঙ্গলবার বামপন্থী নেতাদের সঙ্গে নিয়ে লেনিন গার্ডেন সহ লেনিনের একটি মূর্তি উন্মোচন করেন খড়গপুরের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক প্রদীপ সরকার। এই মূর্তি উন্মোচন ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে।

তৃণমূল বিধায়ক বলেন, লেনিন কোনও দলের নন, সবার। উনি মেহনতি মানুষের জন্য আন্দোলন করেছেন। আমাদের সরকার সবসময় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করে। আমরা রাজনীতি দূরে রেখে কাজ করতে চাই। পৌরসভার উদ্যোগে আমরা লেনিনের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করলাম। মূর্তির প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে খড়্গপুরের মানুষকে যেমন ডেকেছি, তেমনই খড়্গপুরের সমস্ত বামপন্থী মানুষ যারা লেনিনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতি করেন, তাঁদেরও আমরা ডেকেছি। খড়গপুর থেকে আমরা এই বার্তা দিতে চাই যে, রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকবে, কিন্তু উন্নয়নের স্বার্থে যাতে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি। এটা কোনও চমক নয়, চমকের রাজনীতি আমরা করি না।

শাসক দলের বিধায়কের উদ্যোগে স্বাগত জানিয়ে বামফ্রন্টের জেলা নেতা অনিল দাস বলেন, এটা রাজনৈতিক সৌজন্যের পরিচয়। একটা দৃষ্টান্ত তৈরি হল। পশ্চিমবঙ্গের বুকে এখন রাজনীতির , ঝগড়া দেখছি। তাদের কাছে একটা বার্তা গেল। সৌজন্যবোধ হল রাজনীতির শেষ কথা। আদর্শগতভাবে আমাদের মধ্যে বিরোধ থাকতে পরে। রাজনৈতিক ময়দানে আমাদের বক্তব্যের মধ্যে লড়াই হতে পারে। আজ লেনিনের মূর্তি উন্মোচনের মধ্য দিয়ে যে দৃষ্টান্ত তৈরি হল, তাতে শুধু খড়গপুর নয়, সারা বাংলায় একটা নতুন বার্তা পৌঁছবে।

যদিও প্রদীপ সরকারের লেনিনের মূর্তি উন্মোচনকে কটাক্ষ করে জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি গৌতম ভট্টাচার্য বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত বিধায়ক জানেন, এবার ভোটে জিততে পারবেন না। তাই বামপন্থীদের নিয়ে এক রাস্তায় হাঁটার আয়োজন করেছেন। লেনিন আন্তর্জাতিক স্তরের নেতা। তাঁকে সম্মান জানানো অবশ্যই দরকার। কিন্তু তার আগে উচিত ছিল ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী, স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজির মতো ভারতবর্ষের মনীষীদের মূর্তি বসানো বা ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তি বসানোর ব্যবস্থা করা যা খড়্গপুরে নেই। ভোটের দিকে তাকিয়ে প্রদীপ সরকার এসব করছেন। এই অনুষ্ঠানে আজ বামপন্থী নেতারা ওনার সঙ্গে ছিলেন। পশ্চিমবাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বামফ্রন্টকে নিয়ে চলতে চাইছেন, তার সূচনাই আজ খড়গপুরে হল।

সাম্প্রতিক কালে রাজ্য রাজনীতিতে মণীষীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন নিয়েও বিতর্ক চলছে। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা, বিবেকানন্দের মূর্তিতে কালি লেপা, রবীন্দ্রনাথের ছবির ওপর পোস্টারে রাজনৈতিক নেতাদের ছবি রাখা-সবই ঘটছে। তার মধ্যেই ব্যতিক্রমী নজির তৈরি হল খড়গপুরে।