রুমা পাল ও সুমন ঘড়াই, কলকাতা:  ১০ মার্চ নন্দীগ্রামে গিয়ে আহত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনায় ভোটের মুখে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায়।


শুক্রবারই এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন মুখ্যসচিব। কিন্তু সূত্রের খবর, আরও কিছু তথ্য জানতে চেয়ে ফের নবান্নকে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিল নির্বাচন কমিশন। শনিবার ফের সেই রিপোর্ট জমা পড়েছে কমিশনে। 


নবান্ন সূত্রে খবর, সেই রিপোর্টে মুখ্যমন্ত্রীর কী করে আঘাত লাগল, তা লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। 


বুধবার নন্দীগ্রামে আঘাত পান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোড়ালি ও পায়ের পাতায় আঘাত নিয়ে নন্দীগ্রাম থেকে কলকাতার এসএসকেএম-এ আনা হয় তৃণমূল নেত্রী তথা নন্দীগ্রামের প্রার্থীকে।


যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা মুখ্যমন্ত্রীকে পাঁজাকোলা করে গাড়ির পিছনের সিটে শুইয়ে দেন তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা।


সেই অবস্থায় গ্রিন করিডোর করে মুখ্যমন্ত্রীকে নন্দীগ্রাম থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নিয়ে আস হয় কলকাতার এসএসকেএম-এ।


নন্দীগ্রামের ঘটনা নিছকই দুর্ঘটনা? না গভীর ষড়যন্ত্র? সেসব নিয়ে ভোটের মুখে স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়ে যায় রাজনৈতিক চাপানউতোর। 


গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোট ঘোষণা করে দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।  আর তার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যে চালু হয়ে গিয়েছে আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি।


পুলিশ প্রশাসনের রাশ এখন রাজ্য সরকারের হাত থেকে চলে গিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের হাতে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব কার? 


এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দিকে আগেই আঙুল তোলে তৃণমূল!  দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, নির্বাচন কমিশন নিরাপত্তা দিতে পারেনি।


পাল্টা তৃণমূলকে আবার কড়া ভাষায় কমিশন জানিয়ে দিয়েছে,  পশ্চিমবঙ্গ-সহ কোনও রাজ্যেরই দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজকর্ম কমিশন নিজের হাতে নেয়নি।


মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদনসাপেক্ষে নিয়ে যেভাবে প্রশাসনিক কাজকর্ম চলে, তেমনই চলছে। নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের ইচ্ছেয় এসব হচ্ছে বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার উত্তর দেওয়াটাও অসম্মানজনক।


নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, নন্দীগ্রামের ঘটনায় এখনও তদন্ত চলছে। ২ মে-র মধ্যে তদন্ত শেষ হলে এবং এই ঘটনায় যদি কেউ দোষী প্রমাণিত হয়, সেক্ষেত্রে পদক্ষেপ করবে কমিশন। 


মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গাফিলতি থাকলে তা নিয়েও পদক্ষেপ করা হবে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর। 


তবে নন্দীগ্রামের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় এবং সমগ্র ভোটকে কেন্দ্র করে যে কোনওরকম অশান্তি এড়াতে এদিন জেলাশাসকদের কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। 


দু’দিন থাকার পর শুক্রবার সন্ধেয় এসএসকেএম থেকে ছাড়া পান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্ধে সাতটা নাগাদ বাঁ পায়ে প্লাস্টার, পায়ে বিশেষ ধরনের স্যান্ডেল, হুইল চেয়ার করে হাসপাতাল থেকে বের হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিম। 


এদিকে সমগ্র ভোট প্রক্রিয়াকে নিরাপদে শেষ করতে আরও কেন্দ্রীয় বাহিনী আসছে রাজ্যে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, প্রথম দফার আগেই রাজ্যে মোট ৭২৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চলে আসবে।


তবে সেই বাহিনী বেড়ে এক হাজার কোম্পানি হতে পারে।