কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান : শুক্রবার ২৯৪ আসনের জন্য পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর তাঁর আগে বুধবার পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে তৃণমূল নেতৃত্বকে হুঁশিয়ারি দিয়ে পড়ল ফ্লেক্স। যে ফ্লেক্সে বহিরাগত কাউকে প্রার্থী না করার বার্তা দিয়ে ভূমিপুত্রকে আসন ছাড়ার কথা বলা হয়েছে। হুঁশিয়ারির সুরে 'জামালপুরের জনগণ' ফ্লেক্সে লেখা হয়েছে, বহিরাগত কাউকে প্রার্থী করলে পরিনাম হবে ভয়ঙ্কর। বহিরাগত প্রার্থী হলে ভোটের দিন সাপ-লুডো খেলে দেবে জনগণ। যে ফ্লেক্স নিয়ে শাসকদলকে কটাক্ষ করার সুযোগ ছাড়েনি বিজেপি। তৃণমূলের পাল্টা, এটা বিরোধীদের চক্রান্ত।


নবান্ন দখলের যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। লাগাতার বহিরাগত তত্ত্ব খাড়া করে বিজেপিকে বিঁধে চলেছে তৃণমূল। সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগে বলেছিলেন,‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৫ ফুট ২ ইঞ্চির এক মহিলা। টালির ছাদের নীচে থাকেন, হওয়াই চটি পরে গ্রামাঞ্চলে ঘুরে বেড়ান। তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করতে উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত থেকে নেতাদের টেনে আনতে হচ্ছে। মনে রাখবেন, উত্তরপ্রদেশের গুটখার থুতুতে বাংলার লোহায় জং ধরবে না।’


এরইমধ্যে বহিরাগত ইস্যুতে এবার অস্বস্তিতে পড়ল খোদ তৃণমূলই! বুধবার এই ধরনের ফ্লেক্সে ছেয়ে যায় পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের একাধিক জায়গা। ফ্লেক্সগুলিতে লেখা রয়েছে ‘প্রার্থীর নাম ঘোষণার আগে তৃণমূল নেতারা সাবধান হন। এবারও বহিরাগত কাউকে প্রার্থী করা হলে পরিণাম ভয়ঙ্কর হবে। ভোটের দিন সাপ-লুডো খেলে দেবে জামালপুরের জনগণ।’ কিছু ফ্লেক্সে রয়েছে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ও ঘাস-ফুল প্রতীক। ‘জামালপুরের জনগণ’-এর নামে দেওয়া হয়েছে ফ্লেক্সগুলি। 




এ নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি পদ্ম-শিবির। পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূলও। জামালপুরের বিজেপি আহ্বায়ক জিতেন ডকাল বলেন, ‘আমাদেরকেই তৃণমূল বহিরাগত বলত। এবার বহিরাগত প্রার্থী চাই না বলেই তৃণমুলের ফ্লেক্স পড়াতে মনে হচ্ছে তৃণমুলই বহিরাগত দল। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলেই এটা হয়েছে ৷’


পূর্ব বর্ধমানের তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, ‘‘দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক করবেন কে প্রার্থী হবেন। তৃণমূল কর্মীরা তাঁকে মেনে নেন। এটা বিরোধীদের চক্রান্ত।’’


২০১১-য় রাজ্যে পালাবদলের সময় জামালপুরে কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবে জয়ী হন উজ্জ্বল প্রামাণিক। কিন্তু, তিনি বর্ধমান শহরের বাসিন্দা। সূত্রের খবর, এরপর থেকেই তৃণমূল নেতা মেহেমুদ খানের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়তে শুরু করে। ২০১৬-য় সিপিএমের সমর হাজরার কাছে হেরে যান উজ্জ্বল। ২০১৮-র জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হন মেহেমুদ খান। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বর্ধমান পূর্ব থেকে তৃণমূলের  টিকিটে জেতেন সুনীল মণ্ডল। জামালপুর বিধানসভা বর্ধমান পূর্বের অন্তর্গত। 


১৯ ডিসেম্বর মেদিনীপুরে অমিত শাহর সভায় বিজেপিতে যোগ দেন সুনীল মণ্ডল। অন্যদিকে লোকসভা ভোটের নিরিখে জামালপুর কেন্দ্রে সাড়ে ৩ হাজারের সামান্য বেশি ভোটে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। ১৭ এপ্রিল পঞ্চম দফায় জামালপুরে ভোটগ্রহণ। ভূমিপুত্র নাকি বহিরাগত কাউকে প্রার্থী করবে তৃণমূল? জল্পনা তুঙ্গে। 


২০২১-এর জামালপুরের জনগণ নামাঙ্কিত ফ্লেক্সে তৃণমুলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগে বহিরাগত প্রার্থী নিয়ে হুশিয়ারি ফ্লেক্স পড়ায় নির্বাচনের দিন তৃণমুলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দিকে ইঙ্গিত দেয় বলে অনুমান রাজনৈতিক মহলের। যদিও বিজেপির দাবি তৃণমুলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্যই এই ঘটনা। 




এমনকী, ফ্লেক্স বির্তকে তৃণমুলকে কটাক্ষ করে বিজেপির জিতেন ডকাল,জামালপুর বিধানসভার কনভেনারের অভিযোগ, ‘‘আমাদেরকেই তৃণমুল বহিরাগত বলতো এবার বহিরাগত প্রার্থী চাই না বলেই তৃণমুলের ফ্লেক্স পড়াতে মনে হচ্ছে তৃণমুলই বহিরাগত দল। পাল্টা বিজেপির চক্রান্ত দাবী করে তৃনমুলের জেলা মুখপাত্র প্রসেনজিত দাসের বক্তব্য দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক করবেন কে প্রার্থী হবে।তা তৃনমুল কর্মীরা মেনে নেন।এটা বিরোধীদের চক্রান্ত।