সমিত সেনগুপ্ত, ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী ও সমীরণ পাল: ব্যারাকপুরে রাজ চক্রবর্তী থেকে আসানসোল দক্ষিণে সায়নী ঘোষ, বাঁকুড়ায় সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে উত্তরপাড়ায় কাঞ্চন মল্লিক।
তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন সবাই। কিন্তু তাঁদের নিয়ে দলের অন্দর থেকেই উঠে আসছে ক্ষোভের সুর। জুড়ে দেওয়া হচ্ছে বহিরাগত তকমা। তবে দ্রুত অসন্তোষ মিটবে বলে আশাবাদী তৃণমূলের তারকা প্রার্থীরা।
উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরে, পরিচালক রাজ চক্রবর্তীকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। তা নিয়েই প্রকাশ্যে চলে এসেছে তৃণমূলের একাংশের ক্ষোভ। ব্যারাকপুরের তৃণমূল নেতা তথা পুরসভার প্রশাসক উত্তম দাস বলেন, বারবার বহিরাগত প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা ভাল নয়।
রাজ নিজে অবশ্য আশাবাদী, মতবিরোধ মিটিয়ে, সবপক্ষকে একত্রিত করে তাঁর প্রচারে নামাতে পারবেন। বললেন, আমি গিয়ে মিটিয়ে নেব।
তারকা প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাঁকুড়াতেও। বাঁকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রে এবার অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেছে তৃণমূল।
যার পরেই ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি এই কেন্দ্রের বিদায়ী বিধায়ক শম্পা দরিপা। বলেছেন, বাংলার মেয়েকে সবাই চায়, এখানে বাঁকুড়ার মেয়েকেই সবাই চায়, তাহলে বাইরে থেকে প্রার্থী আনা হচ্ছে কেন?
গত লোকসভা ভোটের বিধানসভাভিত্তিক ফলের নিরিখে, বাঁকুড়ার ১২টি কেন্দ্রেই এগিয়ে আছে বিজেপি। এই প্রেক্ষাপটে প্রার্থীপদ নিয়ে ক্ষোভ, শাসকের চিন্তা বাড়াচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি প্রথমে শম্পা দরিপার কাছেই যাবেন।
যদিও, দলের অন্দরে বিক্ষোভের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বাঁকুড়া তৃণমূল কংগ্রেস জেলা সভাপতি শ্যামল সাঁতরা কোনও ক্ষোভ-বিক্ষোভ নেই, দলের তরফে কথা বলা হয়েছে, সব মিটে যাবে।
হুগলির উত্তরপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এবার সেখানে অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিককে টিকিট দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তা নিয়ে বিরোধীদের পাশাপাশি বহিরাগত প্রশ্ন উঠছে খোদ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অন্দর থেকেই।
এপ্রসঙ্গে উত্তরপাড়ার তৃণমূল প্রার্থী কাঞ্চন মল্লিক বলেন, বহিরাগত শব্দে আমার আপত্তি আছে, আমি সকলের কাছে যাব কথা বলব, কাজ করব।
শিবপুরে জটু লাহিড়ির বদলে এবার ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারিকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। যার জেরে অসন্তোষ চরমে। জটু লাহিড়ি বিজেপিতে যাবেন বলে মনস্থির করেছেন। প্রার্থীপদের আরেক দাবিদার বিভাস হাজরার অনুগামীরাও শনিবার রাস্তায় নামেন।
‘বহিরাগত বাউন্সার’কে স্বভাবচিত ভঙ্গিতে হুক করে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়েছেন মনোজ। বলেন, ওখানে আমি ছোট বেলা থেকে বড় হয়েছি, ওটা আমার নিজের জায়গা।
সোনারপুর-দক্ষিণে জীবন মুখোপাধ্যায়ের বদলে অভিনেত্রী লাভলি মৈত্রকে টিকিট দিয়েছে তৃণমূল। লাভলি মৈত্রর স্বামী হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপার সৌম্য রায়।
এই নিয়ে বিরোধীরা সুর চড়িয়েছে। পাল্টা জবাব দিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীও। বলেন, আমার একটা আলাদা আইডেনন্টিটি আছে, বিজেপি মহিলাদের সম্মান দেয় না। যদিও এ ব্যাপারে হাওড়া গ্রামীণ জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের মুখে কুলুপ।
উলুবেড়িয়া পূর্বে ইদ্রিশ আলির বদলে এবার প্রাক্তন ফুটবলার বিদেশ বসুকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। এরপরই বহিরাগত তকমা দিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। শুক্রবার রাত থেকে ক্ষোভ-বিক্ষোভ হচ্ছে।
এদিনও উলুবেড়িয়ায় প্রাক্তন উপ পুরপ্রধান আব্বাসউদ্দিন খানের নেতৃত্বে মিছিল করেন বিক্ষুব্ধরা। তিনি বলেন, এখানে ভূমিপুত্র প্রার্থী দিতে হবে।