এ মাসের ৯ তারিখ বনগাঁয় সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সভায় তিনি বিজেপি-কে আক্রমণ করে বলেন, ‘ক্যা ক্যা বলে প্রতারণা করা হচ্ছে। এদের একবার সুযোগ দিলেই ঠাকুমার বাবা, ঠাকুরদাদার জন্ম তারিখ চাইবে। দিতে পারবেন? রাজ্য সরকার আপনাদের নাগরিক বলে দিয়েছে। রাজ্য সরকার উদ্বাস্তু কলোনিগুলিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দাঁড়িয়ে বলছি মতুয়ারা সকলে নাগরিক। আপনাদের কোনও প্রমাণপত্রের প্রয়োজন নেই। এনআরসি, এনপিআর করতে দেব না। পঞ্চানন বর্মা, বীরসা মুন্ডার মতো হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতেও রাজ্য সরকার ছুটির দিন ঘোষণা করবে।’ এরপরেই মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তি জারি করল রাজ্য সরকার।
বনগাঁ আসনটি ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। ঠাকুরনগরে মতুয়া মহাসঙ্ঘের সদর দফতর। এখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ হয়, রাজ্যের প্রায় ৪৮টি বিধানসভা আসনে ফ্যাক্টর হওয়া মতুয়া ভোট কোন দিকে যাবে। এই পরিস্থিতিতে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে তৃণমূলের থেকে সরে যাওয়া মতুয়া ভোটকে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফেরাতে তত্পর সব দলই।
একদা সিপিএম থেকে শুরু করে এখন তৃণমূল-বিজেপি, প্রত্যেকেরই নজর মতুয়া ভোটের দিকে। আর সেজন্যই এনআরসি-সিএএ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মতুয়াদের কাছে নাগরিকত্ব বিষয়টি সবসময় অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়।
মতুয়া মহাসঙ্ঘ সূত্রে খবর, ভারতে প্রায় ৫ কোটি মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। এর মধ্যে ৩ কোটি মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ থাকেন পশ্চিমবঙ্গে। সিএএ পাশ হয়ে গেলেও তা এখনও কার্যকরী না হওয়ায় সাম্প্রতিককালে একাধিকবার পরোক্ষে দলের বিরুদ্ধেই উষ্মা প্রকাশ করেছেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। বিধানসভা ভোটের আগে সিঁদুরে মেঘ দেখে, সম্প্রতি জানুয়ারির শুরুতেই সিএএ কার্যকরী হওয়ার আশ্বাস দিতে দেখা গেছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে। এই অবস্থায় ভোটের আগে কোন দল মতুয়াদের কত কাছের তা নিয়ে, ঠাকুরবাড়ি আড়াআড়িভাবে বিভক্ত।
এই পরিস্থিতিতে এবার প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তথা মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুরের ডাকে ঠাকুরবাড়িতে বিক্ষোভ সমাবেশ। নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবিতে দেখানো হবে বিক্ষোভ। আগামী ২৮ ডিসেম্বর বড়মা বীনাপাণি দেবীর বাড়ির সামনে বিক্ষোভে সামিল হবেন মতুয়ারা।
১০ বছর আগে ২০১০ সালের ২৮ ডিসেম্বর বড়মা বীনাপানি দেবী কলকাতার ধর্মতলায় নাগরিকত্বের দাবিতে সমাবেশ করেন। সেই দিনের কথা স্মরণ করে ফের নাগরিকত্ব ইস্যুতে সুর চড়াবেন মতুয়ারা।