কলকাতা: বাংলার বিধানসভা ভোটের আগে মণীষীদের নিয়েও শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। এবার তার ছাপ পড়ল বাজেটেও। ২৩ জানুয়ারি নেতাজির ১২৫তম জন্মদিবসে, রাজ্যে কার্যত কর্মসূচির প্রতিযোগিতায় নেমেছিল তৃণমূল এবং বিজেপি।


শুক্রবার রাজ্য বাজেটে নেতাজির নামে একাধিক প্রকল্পে বরাদ্দ ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক) কলকাতা পুলিশে নেতাজি ব্যাটালিয়নের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১০ কোটি টাকা। দুই) জেলায় জেলায় জয় হিন্দ ভবনের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। তিন) নিউটাউনে আজাদ হিন্দ স্মারকের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। এছাড়া, মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যোজনা কমিশন তুলে দিয়েছে। নেতাজি রাজ্য যোজনা কমিশন তৈরি হবে। বরাদ্দ ৫ কোটি টাকা।


এনিয়ে পাল্টা খোঁচা দিয়েছে বিরোধীরা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, নেতাজিকে নিয়ে বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে টানাটানি শুরু হয়েছে। বামফ্রন্ট পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, বিজেপির খোঁচায় আপনার নেতাজির কথা মনে পড়ল।


২৩ জানুয়ারি নেতাজির ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে কলকাতায় এসে এলগিন রোডে সুভাষচন্দ্র বসুর বাসভবনে গেছিলেন নরেন্দ্র মোদি।


সেদিন সন্ধেয় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেই অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সরকারি অনুষ্ঠানে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান ওঠার প্রতিবাদে বক্তৃতা দেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


সেই ঘটনা ঘিরে তুঙ্গে ওঠে রাজনৈতিক চাপানউতোর। শুক্রবার বিধানসভার বাজেট অধিবেশনেও সেই জয় শ্রীরাম স্লোগান দেন বিজেপি বিধায়করা। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র অসুস্থ থাকায় এদিন বাজেট পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, এমনটা কেন হবে, সেই প্রশ্ন তুলে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। ওঠে জয় শ্রীরাম স্লোগান।


এনিয়ে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেন ক্ষুব্ধ স্পিকার। বিজেপি বিধায়কদের হইহট্টগোলে ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, এই চার-পাঁচজনেই যদি এরকম হয়, বুঝুন অবস্থা।


অধীর চৌধুরী বলেন, মানুষকে বোকা বানাতে অমিত মিত্রর বদলে মুখ্যমন্ত্রী নিজে বাজেট পড়ছেন। বিজেপি বিধায়করা ওয়াকআউট করার পর বাজেট পড়তে শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী।


শুক্রবার কার্যত বিরোধীহীন বিধানসভাতে ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বাম-কংগ্রেস আগেই বাজেট বয়কট করেছিল। এদিন অধিবেশন শুরুর পর বিজেপিও ওয়াকআউট করে।


বিধানসভায় প্রায় নজিরবিহীন ভাবে অর্থমন্ত্রীর পরিবর্তে দিন বাজেট পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রর শারীরিক অসুস্থতার কারণে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের অনুমতি নিয়ে বাজেট বক্তৃতা পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।


এর আগে ১৯৮৬ সালে বামফ্রন্ট জমানায় অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র পদত্যাগ করায় মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বাজেট পেশ করেছিলেন।