গোপাল চট্টোপাধ্যায় ও আবীর ইসলাম, শান্তিনিকেতন: একসময় যাঁদেরকে ভিটেছাড়া করেছিল গ্রামবাসীরা, সঙ্কটকালে তাঁরাই এখন ত্রাতার ভূমিকায়। বীরভূমের বাঁধ নবগ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত চুড়কি হাঁসদা এখন খবর পেলেই গাড়ি নিয়ে ছোটেন করোনা আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে।
মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতেই চেয়েছিলেন চুড়কি। কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে লড়তে হয়েছে দীর্ঘ লড়াই। শান্তিনিকেতনের বাঁধ নবগ্রামের চুড়কি হাঁসদাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সেই লড়াইটা স্বপ্নের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। সমাজ যাঁদের ঠেলে দিয়েছিল সঙ্কটের মুখে। করোনার সঙ্কটকালে তাঁরাই এখন ত্রাতার ভূমিকায়। কোথাও করোনা আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে হবে। কোথাও দ্রুত পৌঁছে দিতে হবে অক্সিজেন। কখনও ভ্যান, কখনও আবার চারচাকা গাড়ি। বীরভূমের চুড়কি হাঁসদার বিশ্রাম নেওয়ার ফুরসত নেই।
সালটা ২০০৪। স্রেফ সন্দেহের বশে আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত চুড়কিদের গোটা পরিবারকে বাড়িছাড়া করেছিলেন গ্রামবাসীরা। ছোট ছোট চার সন্তান আর বোঁচকায় সংসার বেঁধে চুড়কি সহ চার সন্তানকে নিয়ে গোপালনগরের পুরোনো ভিটে ছেড়েছিলেন ফুলমণি আর বাদল। আসলে তাঁরা চেয়েছিলেন ছেলে-মেয়েদের শিক্ষিত করতে, তাই রাতভর আলো জ্বলতো বাড়িতে। সেই আলো দেখেই সন্দেহ করেছিলেন গ্রামবাসীরা।বাঁধ নবগ্রামের বাসিন্দা চুড়কি হাঁসদার মা ফুলমণি হাঁসদা বলেন, রাত অব্দি আলো জ্বলত, ডাইনি সন্দেহে গ্রামছাড়া করে। এখানে ওখানে কাটিয়ে শেষমেশ এখানে আসে। আলো জ্বলত বলে অনেকে অনেক কথা বলত। ২ বছর ঘুরে বেড়িয়েছি।
হাজারো বাধা পেরিয়ে, লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন চুড়কি ও তার ভাইবোনেরা। এরই মধ্যে চুড়কি হাঁসদা যুক্ত হয়েছেন এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে খুশি। চুড়কি হাঁসদার কথায়, মানুষকে হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছি, যা দরকার পৌঁছে দিচ্ছি, আগে কেউ ভালো ভাবে নেয়নি। মানুষের পাশে থাকতে পেরে ভালো লাগছে।
চুড়কির প্রশংসায় পঞ্চমুখ রোগীর আত্মীয়রাও। করোনা আক্রান্তের এক রোগীর আত্মীয় মৌমিতা রায় বলেন, এই কাজে সত্যিই খুব খুশি। বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লকের বিডিও শেখর সাই বলেন,আদিবাসী সমাজ যে মেয়েটাকে সমাজ থেকে বিতাড়িত করেছিল। সেই মেয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। আদিবাসী মেয়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে এরকম যদি সাহায্য লাগে আমরা সবসময় পাশে আছি।