কলকাতা:  বৃদ্ধতন্ত্রই কি সিপিএমের কাঁটা? রবিবার দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে সূর্যকান্ত মিশ্র প্রস্তাব দেন, নতুন রাজ্য কমিটির সদস্যদের বয়স ৭৫-এর মধ্যে হতে হবে। যাঁদের বয়স ৭৫-এর কম কিন্তু, শারীরিকভাবে অসুস্থ ও অসমর্থ, তাঁদের স্বেচ্ছায় সরে যাওয়া উচিত। এতে কি কাজ হবে? উঠে আসবে তরুণ প্রজন্ম? আর সেটা না হলে কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে সিপিএম?


পাকা চুল নয়। আনতে হবে কাঁচা চুলের জোয়ানদের। না হলে দল বাঁচানো যাবে না।

কথাটা একসময় বলেছিলেন, তদানীন্তন সিপিএম নেতা রেজ্জাক মোল্লা। অধুনা তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী রেজ্জাকের সেই মতকেই এবার মান্যতা দিতে চলেছে সিপিএম???

রাজ্য সম্পাদকের এই প্রস্তাব শুনে, রাজ্য কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য বলেন,

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অসুস্থ হলেও তাঁর ভাবমূর্তি ও দলের প্রতি অবদানের কথা মাথায় রেখে তাঁকে রাজ্য কমিটিতে রেখে দেওয়া হোক।

এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম অবশ্য বিমান বসু। কারণ দল মনে করে, বয়স হলেও বিমান এখনও কর্মক্ষম। যদিও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ বলছেন, বিমান বসু দলকে নেতৃত্ব দিন ভাল কথা। সঙ্গে তরুণ প্রজন্মকেও দলের সামনের সারিতে আনা হোক। যদি তা না হয়, তাহলে বাস্তবসম্মত এবং সময়োপোযোগী পদক্ষেপ কীভাবে নেবে একটা রাজনৈতিক দল? নতুন ভাবনাচিন্তার জন্য তো তরুণ মুখ দরকার! সেটা আর কবে বুঝবে সিপিএম নেতৃত্ব?

সূত্রের খবর,  রাজ্য কমিটির বৈঠকে ঠিক হয়েছে, সিপিএমের নতুন রাজ্য কমিটি হবে ৮০ জনের। তাতে কম বয়সী ও মহিলা সদস্যের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আলিমুদ্দিন।

পর্যবেক্ষকদের একাংশ বলছে, সিপিএমে বৃদ্ধতন্ত্রের উদাহরণ ঝুরি ঝুরি। কিন্তু, একটা উদাহরণ দিলেই গোটা বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যেতে পারে।

পুরুলিয়ার জেলা সিপিএমের সম্পাদক ছিলেন নকুল মাহাতো।

১৯৬৪ সালে সিপিএমের জন্মলগ্নে তিনি পুরুলিয়ার জেলা সম্পাদক হন। পদ ছাড়েন ২০১১ সালে। অর্থাৎ টানা ৪৭ বছর এক পদে।

এই যদি দলের হাল হয়, তাহলে তরুণ নেতৃত্ব উঠে আসবে কী করে? প্রশ্ন অনেকেরই। সেইসঙ্গে পর্যবেক্ষকদের একাংশের বক্তব্য বৃদ্ধতন্ত্রের প্রশ্নে বঙ্গ সিপিএমের ছোঁয়াচ লেগেছিল পড়শি ত্রিপুরাতেও! কারণ, একটানা ২৫ বছর ধরে সেখানে ক্ষমতায় ছিল বামেরা। যাঁকে সামনে রেখে, প্রতিটি নির্বাচনে সিপিএম ঝাঁপিয়েছে, তিনি মানিক সরকার। নেতৃত্ব দেওয়ার মতো সেভাবে নতুন কোনও মুখ উঠে আসেনি। ত্রিপুরা সিপিএম অনেকটাই মানিক-নির্ভর হয়ে পড়েছিল! এবারও সেই মানিকই ছিলেন দলের নির্বাচনী-সেনাপতি। তাঁর ‘ইমেজ’কে কাজে লাগিয়েই ভোটে বিজেপিকে রোখার কৌশল নিয়েছিল সিপিএম। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা ঘটেনি। মানিক জিতলেও, ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে তাঁরই হাতে তৈরি ২৫ বছরের বাম দুর্গ। পর্যবেক্ষকদের একাংশের ব্যাখ্যা, এখানেই বাজিমাত করেছে বিজেপি। নতুন প্রজন্মের ভোটারদের মন পেতে তারা ‘হাতে হাতে স্মার্ট ফোন’, SEZ তৈরির মতো একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এই সব পদক্ষেপই ‘সেভেন সিস্টার্সের’ একজনকে দখল করেছে ‘পদ্ম শিবির’।