সমিত সেনগুপ্ত, জয়দীপ হালদার ও ঋত্বিক প্রধান, ফ্রেজারগঞ্জ ও দিঘা: পরপর দু’বছর আমফান আর ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুন্দরবন। গত বছর আমফান এরপরেই সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ জঙ্গল পুনরুজ্জীবনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু বছর ঘুরতেই ইয়াস ঝড়ে আবারও ধ্বংস হয় বেশ কিছু ম্যানগ্রোভ। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সুন্দরবনকে নতুন করে গড়ার কাজ শুরু করল রাজ্য বন দফতর। সুন্দরবনের পরিবেশেই ম্যানগ্রোভ নার্সারিতে তৈরি করা হচ্ছে ম্যানগ্রোভের চারা। এই চারাগুলি বসানো হবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এবং নদীর পাড়ের গ্রামগুলির মাটির বাঁধের কাছে।
একটি ভিডিও প্রকাশ করে সেই সুন্দরবন পুনর্গঠনের ছবি তুলে ধরেছে রাজ্য বন দফতর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার বিশ্ব ম্যানগ্রোভ দিবসে তাঁর ফেসবুক বার্তায় লিখেছেন, ‘উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা মিলিয়ে মোট ১০ হাজার ৭০০ একর এলাকাজুড়ে ১৫ কোটি ম্যানগ্রোভ লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। এই কাজে ১০০ দিনের কাজের কর্মীদের নিয়োগ করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ২৩.৭২ লক্ষ কর্মদিবস তৈরি হবে।’
সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৫ কোটি ম্যানগ্রোভের বাদাবন গড়ে তোলা হবে। কারণ বাদাবন থাকলে তবেই নদী ও সমুদ্র বাঁধ বাঁচবে। আর বাঁধ বাঁচলে সুন্দরবন বাঁচবে। সোমবার বিশ্ব ম্যানগ্রোভ দিবসের মূল অনুষ্ঠান হয় ফ্রেজারগঞ্জের হেনরি আইল্যান্ডে। এখানে বঙ্গোপসাগরের চরে ম্যনগ্রোভ রোপন করেন সুন্দরবন দফতরের মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা, জেলাশাসক পি উলগানাথন, জেলার মুখ্য বনপাল মিলন মণ্ডল-সহ আন্যান্য আধিকারিকরা। এই দিনটিকে ‘ম্যানগ্রোভ লাগাও সুন্দরবন বাঁচাও’ স্লোগানকে সামনে রেখে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন পালন করে। জেলার সুন্দরবনের ১৩টি ব্লকে ৫ লক্ষ ম্যানগ্রোভ চারা লাগিয়ে দিনটি পালন করা হয়।
এদিন বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘আমফান, ইয়াস, বুলবুল ঘূর্ণিঝড়ের সময় দেখা গিয়েছে যেখানে ম্যানগ্রোভের বন ছিল, সেখানে বাঁধের ক্ষতি কম হয়েছে। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকা সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্র কোনও টাকা দেয়নি। শুধু ম্যানগ্রোভ রোপন করলে হবে না, সেই গাছ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একশো দিনের কাজের প্রকল্পের মহিলাদের ভূমিকা নিতে হবে।’
জেলাশাসক বলেন, ‘ম্যানগ্রোভ বাঁচিয়ে রাখতে হবে’, এই স্লোগানকে সামনে রেখে আজকের দিনটি পালন করতে চেয়েছি। অনেকেই এখনও ম্যনগ্রোভ ধ্বংস করছে। আমরা সেই এলাকার মানুষকে বোঝাব। এক লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাকে এই কাজে লাগানো হবে। ২৫ কোটি টাকা খরচ করা হবে। এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা, পাঁচ কোটিরও বেশি ম্যনগ্রোভ রোপন করা হবে।’
বিশ্ব ম্যানগ্রোভ দিবসে পূর্ব মেদিনীপুরেও উপকূলে ম্যানগ্রোভ রোপন প্রকল্পের সূচনা হল দিঘায়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী, ১১১টি প্রকল্পের মধ্য দিয়ে ৫৩০ হেক্টর জমিতে এই ম্যানগ্রোভ লাগানোর কাজ চলবে। এক বছরের মধ্যে তা রূপায়ণ করা হবে। দিঘার ওড়িশা সীমানা থেকে ৬৫ কিলোমিটার বরাবর যেখানে যেখানে নিচু জায়গা এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা, সেসব জায়গায় প্রথমে ম্যানগ্রোভ লাগানোর কাজ জোরকদমে চলবে। এই সমস্ত গাছ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বেশ কিছু ক্লাব এবং সেলফ হেল্প গ্রুপের মহিলা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা এই সমস্ত গাছ রক্ষণাবেক্ষণ করবে এবং একশো শতাংশ গাছ বাঁচলে স্কিম অনুযায়ী টাকা পাবে। যতগুলি গাছ মারা যাবে, সেই সব টাকা কাটা যাবে। রাজ্য সরকারের জেলা প্রশাসন ও বন দফতরের সহায়তায় এই কাজ চলবে। এদিন এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি, জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকরা। ছিলেন রামনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শম্পা মহাপাত্র সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা।