শান্তনু নস্কর, গোসাবা: ইয়াসের পিঠোপিঠি ভরা কটালের জলোচ্ছ্বাস শুইয়ে দিয়েছিল সুন্দরবনকে। ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার ষোল দিনের মাথায় আবার ভরা কটালের মুখোমুখি বিপর্যয় বিধ্বস্ত গোসাবা। এগারোই জুনের আগে সব নদীবাঁধ সারানো যাবে তো? দুর্গত গ্রামবাসীদের কাছে এখন এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।


প্রথমে আমফান। বছর ঘুরতেই ইয়াস। নদী আর সাগরের তীব্র জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে তছনছ হয়ে গিয়েছে সুন্দরবনের বহু এলাকার মাটির নদীবাঁধ। বিধ্বস্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বাঁধ ছাপিয়ে নদীর নোনা জল ঢুকে এখনও প্লাবিত বহু এলাকা।


এই পরিস্থিতিতে চোখ রাঙাচ্ছে ১১ জুন অমাবস্যার ভরা কটাল।  দুলকি, সোনাগাঁ, রাঙাবেলিয়া, আরামপুর, পাখিরালয়, কচুখালি, কুমিরমারি। একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা আতঙ্কের প্রহর গুনছেন। তাঁদের অভিযোগ, এখনও বহু জায়গায় নদীবাঁধ মেরামতি শেষ হয়নি। আবার বাঁধ ছাপিয়ে জল ঢুকে সর্বস্ব খোয়ানোর আশঙ্কা করছেন দুর্গতরা। 


সোনাগাঁ গ্রামের বাসিন্দা মাধব পড়িয়া বলেন, যে গতিতে কাজ হচ্ছে কী করে ঠেকাবে। ৩ হাজার ফুট নদীবাঁধ ভেঙেছে। মুখের কথা। আমরা প্রচণ্ড ভয়ে আছি। দুলকি গ্রামের বাসিন্দা পঙ্কজ নন্দের কথায়, এই মাটির বাঁধ দিয়ে কটালের জল ঠেকানো কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। দরকার কংক্রিটের নদীবাঁধ।


সোমবার গোসাবায় ইয়াস পরবর্তী পরিস্থিতি পরিদর্শনে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা। তাঁদের সামনেই পাকা নদীবাঁধের দাবিতে সরব হন গ্রামবাসীদের একাংশ। কিন্তু এখন সামনেই আবার দুর্যোগ বিপর্যয়ের অশনি সঙ্কেত। এই পরিস্থিতিতে জোরকদমে মাটির নদীবাঁধ মেরামতির কাজ চালাচ্ছে প্রশাসন। প্রশাসন অবশ্য দাবি করছে, নদীবাঁধ সারানোর অর্ধেকের বেশি কাজ ইতিমধ্যেই শেষ।  


গোসাবার বিডিও সৌরভ মিত্র বলেন, যে সব জায়গায় ভেঙেছে সেখানে নদীবাঁধ নির্মাণের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ। বাকি বাঁধ নির্মাণের কাজ সেচ দফতর জোর কদমে করছে। এবার কটালে গ্রামে আগের মতো জল ঢুকবে না। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সদস্য অনিমেষ মণ্ডল বলেন, যা দরকার, তার চেয়েও দু-তিন ফুট বেশি উচ্চতা বাড়ানো হয়েছে বাঁধের। তবু যদি কিছু হয় আমরা প্রশাসনের তরফে তৈরি আছি। তবু ভয় থেকেই যাচ্ছে গ্রামবাসীদের। সেই সঙ্গে থাকছে বুকে খড় বেঁধে আবার পাথর চাপানোর মানসিক প্রস্তুতি।