পশ্চিম মেদিনীপুর: উচ্চবর্ণের মেয়েকে বিয়ে নিম্নবর্ণের যুবকের। অভিযোগ তার জেরেই পাত্রের পরিবারকে গ্রামে এক ঘরে রাখা হয়েছে।
ওই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কেউ কথা বলে না।বন্ধ দিনমজুরের কাজ।বাজারে গিয়েও ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে।
ছেলের বয়স সাতাশ। মেয়ের, একুশ। দু’জনেই প্রাপ্তবয়স্ক। নিজেদের সিদ্ধান্তে, ১০ বছরের প্রেমকে পরিণতি দিয়েছিলেন। অভিযোগ তারই মাসুল গুণছে পাত্রের পরিবার! গ্রামে কার্যত একঘরে তাঁরা!এ ছবি সবংয়ের চাঁদকুড়ি গ্রামের।
একবিংশ শতকেও সেই জাতপাতের মারণ রোগ!
উচ্চবর্ণের রনিতা মাসান্তের প্রেমে পড়েন নিম্নবর্ণের মধুসূদন গড়াই।সম্প্রতি তাঁরা রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেন। অভিযোগ, এর পর থেকেই সামাজিকভাবে বয়কট করে রাখা হয়েছে মধুসূদনের পরিবারকে।

পাত্রের বাবা কৃষ্ণপ্রসাদ গড়াই বলেছেন, গত কয়েকমাস ধরে বয়কট চলছে। ধোপা মাপিত বন্ধ, কেউ কথা বলেনা। দিনমজুরির কাজ বন্ধ। স্ত্রী পরিচারিকার কাজ বন্ধ। নিচু বর্ণের বলে এরকম করা হচ্ছে। এভাবে সামাজিক বয়কটের মুখে তাঁদের পড়তে হয়েছে বলে জানিয়েছেন গড়াই। তাঁর অভিযোগ, বিডিও ও পুলিশকে জানিয়েও কিছু হয়নি।

পাত্রপক্ষের দাবি, গ্রামের মোড়লদের একঘরে করার সিদ্ধান্তে সায় রয়েছে পাত্রীর পরিবারের।

পাত্রীর মা শ্যামলি মাসান্ত বলেছেন, তাঁদের অমতে মেয়ে বিয়ে করে। তাই ওই বিয়ে তাঁরা মানতে পারেননি।
ভালবাসার টানে ঘর ছেড়েছেন রনিতা। বর্ণের ভেদাভেদ না মেনে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন মধুসুদনকে। এতে পরিজনরা দূরে সরে গিয়েছে, কিন্তু তাতে কোনও আক্ষেপ নেই পাত্রীর। বিয়ের পর থেকে নানা ঝড়ঝাপটা সহ্য করেও তিনি এখনও সুখী দাম্পত্যের স্বপ্ন দেখছেন।

পাত্রের পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে সবংয়ের বিডিও জানিয়েছেন, অভিযোগ পাওয়ার পর প্রধানকে ব্যবস্থা নিতে বলি। সম্ভবত উনি কোনও ব্যবস্থা নিয়েছেন। সমস্যা মিটিয়ে দিয়েছেন।
বিডিও একথা বললেও, পঞ্চায়েত প্রধানের দাবি তিনি এই ঘটনা সম্পর্কে নাকি কিছুই জানেন না!
পরিবার জাতপাত দেখছে। কিন্তু, সেসবকে উপেক্ষা করছেই নতুন প্রজন্মের মধুসুদন-রনিতা নতুন ভারতের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে স্বপ্ন দেখছেন নতুন জীবনের।