উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: এসএসকেএম হাসপাতালে অন্তঃসত্ত্বার জটিল অস্ত্রোপচার সফল হল। টিউমার অপারেশনের পর, সন্তানের জন্ম দেন ওই মহিলা। হাসপাতাল সূত্রে খবর, মা, শিশু দু’জনেই সুস্থ আছে।
বিয়ের ৫ বছর পর প্রথম সন্তান। তাও টেস্ট টিউব প্রক্রিয়ায়। কিন্তু, পথটা অত্যন্ত কঠিন ছিল। প্রথমে সব ঠিক থাকলেও, ডেলিভারি ডেট যত এগিয়ে আসে, তত কঠিন সমস্যারর মুখে পড়তে হয় অন্তঃসত্ত্বাকে। পেটে অসহ্য যন্ত্রণা। এসএসকেএম হাসপাতালের দ্বারস্থ হয় পরিবার। কারণ খুঁজতে গিয়ে চিকিত্সকরা দেখেন, থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের পিছনে রয়েছে একটি টিউমার।
হাসপাতালের গাইনোকোলজির বিভাগীয় প্রধান সুভাষ বিশ্বাস বলেন, এই রোগী যখন আমার কাছে আসে, তখন অনেকগুলো প্রবলেম ছিল। মূল সমস্যাটাই ছিল, থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে একটা টিউমার হয়েছিল। সেটা সেই অবস্থায় রয়েছিল। টিউমার অপারেশন করিয়ে সন্তানের জন্ম দেন।
এই পরিস্থিতিতে প্রথম টিউমারটিকে বের করার কথা ভাবেন চিকিত্সকরা। কিন্তু, সেই অপারেশন যে সহজ নয়, তা জানতেন চিকিত্সকরা। কারণ, ততদিনে, গর্ভস্থ শিশুর বয়স ২৬ সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। এই সময় অপারেশনে মা ও সন্তান দু’জনেরই লাইফ রিস্ক ছিল। অন্তঃসত্ত্বা যে কোনও সময় কোমায় চলে যেতে পারতেন।
এনডোক্রিনোলজি বিভাগের চিকিত্সক সতীনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, আমাদের কাছে যখন এই পেসেন্ট আসে, তখন ক্যালসিয়ামের লেভেল ভয়ঙ্কর হাই। যেকোনও সময় হার্ট অ্যাটাক হতে পারত। এমনকী কোমায় চলে যেতে পারত। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নিই, অপারেশন করে, টিউমারটাকে বের করে দিতে হবে। জটিল হলেও অপারেশন করা হবে বলেই মনস্থির করেন চিকিত্সকরা। সার্জারি বিভাগ চিকিত্সক দীপ্তেন্দ্র সরকার বলেন, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এই অপারেশনে হাত দিই।যা কিছু হতে পারত।
মাত্র ১৫ মিনিটে বের করে আনা হয় টিউমার। এরপর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন অন্তঃসত্ত্বা। তবে, অপারেশন হলেও, সদ্যোজাতর জন্ম নিয়ে কিছু জটিলতা থাকে। সোমবার চিকিত্সকরা ঠিক করেন, সিজার করে সদ্যোজাতকে বের করা হবে। সেইমতো, সকালে চিকিত্সক সুভাষ বিশ্বাসের নেতৃত্বে দেড় ঘণ্টা ধরে বিরল অপারেশনটি হয়। সুস্থ সন্তানের জন্ম দেন মা। অপারেশন ছিল নিঃসন্দেহে কঠিন অপারেশন। এই পরিস্থিতির মধ্যেও এই অপারেশন করে পিজির মুকুটে নতুন পালক যুক্ত হল।