নয়াদিল্লি: একবার ইউপিএসসি পাশ করতেই সকলের জিভ বেরিয়ে যাওয়ার দশা হয়। ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিস অফিসার পুনম দাহিয়ার চিন্তাভাবনা কিন্তু একেবারে অন্যরকম। একবার দুবার নয়, তিন তিনবার এই পরীক্ষা অনায়াসে উতরেছেন তিনি। সে জন্য দিন-রাত এক করে প্রস্তুতি নয়, রোজ ঘণ্টা ছয়েক পড়াশোনা করতেন পুনম। তাতেই চোখধাঁধানো সাফল্য।

ইউপিএসসি দেশের সব থেকে কঠিন পরীক্ষা। দিনে ১৪-১৬ ঘণ্টা পড়েও সাফল্য অনেকের অধরা থেকে যায়। কিন্তু হরিয়ানার ঝজ্জর জেলার মেয়ে পুনমের বক্তব্য, ঘণ্টা ধরে নয়, নিয়মিত পড়াশোনা জরুরি। দিনে ৬-৭ ঘণ্টা লেখাপড়াই যথেষ্ট তবে নিয়মিত তা করতে হবে।  কম পড়ুন কিন্তু রোজ পড়ুন। তাতেই আসবে সাফল্য। এভাবেই তিনি তিন তিনবার এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। পুনম বলেছেন, অনেক পরীক্ষার্থী আছেন যাঁরা একদিন ১৮ ঘণ্টা পড়েন তারপর ২ দিন বই ছুঁয়ে দেখেন না। তারপর আবার ২০ ঘণ্টা পড়া, তারপর ৩ দিন ছুটি। তাঁর বক্তব্য, পাগলের মত পড়ার দরকার নেই, দিনে ঘণ্টাছয়েক পড়ুন কিন্তু রোজ পড়ুন।

আইআরএস পাস করার আগে পুনম দিল্লির একটি স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষিকা ছিলেন। তখন তাঁরবয়স ২১ বছর। তারপর ব্যাঙ্কের চাকরির ফর্ম ভরেন, তাতেও উতরে যান। কিছুদিন চাকরি করেন ব্যাঙ্কে।  এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে গোটা দেশে সপ্তম হন। তাতেও মন ভরেনি তাঁর, ২৮ বছর বয়সে দেন ইউপিএসসি পরীক্ষা। পাশ করলেও র‍্যাংক আশানুরূপ না হওয়ায় আরপিএফে চাকরি পান। ফের পরীক্ষায় বসেন পুনম কিন্তু এবারও জোটে রেলওয়ের চাকরি, এবার আইআরপিএসে। তৃতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে রেভিনিউ সার্ভিসে পেয়ে যান তিনি।

পুনম এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ২০১১ সালে তিনি তিনি তৃতীয়বার এই পরীক্ষা দেন, কিন্তু প্রিলিমিনারি উতরোতে পারেননি। এরপর তিনি হরিয়ানা সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় পাশ করে হরিয়ানা পুলিশে চাকরি পান। কিন্তু কয়েক বছর পর তাঁর কাছে একটি নোটিস আসে, তাতে বলা হয়, ২০১১ সালে ইউপিএসসি-র সিলেবাসে কিছু গন্ডগোল থাকায় ওই বছরের পরীক্ষার্থীরা আর একবার এই পরীক্ষা দিতে পারবেন।
ব্যস, এই নোটিসই বদলে দেয় পুনমের জীবন। ফের তিনি পরীক্ষায় বসেন ২০১৫-য়, এবার পাশ করে যান। যখন প্রিলিমিনারিতে বসেন, তখন তিনি ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা, আর চূড়ান্ত পরীক্ষার সময় ছেলের বয়স আড়াই মাস। কিন্তু কোনও প্রতিকূলতাই থামাতে পারেনি তাঁকে, ভাল ফল করে হয়ে যান আইআরএস অফিসার। পুনম বলেছেন, ইউপিএসসি পাশ করতে সব থেকে জরুরি হল আত্মবিশ্বাস। যত উঁচু পদের জন্য পরীক্ষা দিচ্ছেন তা সফলভাবে সামলানোর জন্য ততটাই আত্মবিশ্বাস জরুরি।