নয়াদিল্লি: বদলে গিয়েছে সু্প্রিম কোর্টের প্রতীক চিহ্ন। পাল্টে গিয়েছে ন্যায় বিচারের প্রতীক 'লেডি জাস্টিসে'র মূর্তিও। সেই নিয়ে এবার মতভেদ তৈরি হল বিচারব্যবস্থার অন্দরেই। দুই ক্ষেত্রেই কারও সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি বলে অভিযোগ সুপ্রিম কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের। যেভাবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে, তা 'মৌলবাদী' আচরণের স্বরূপ বলে মত আইনজীবীদের একাংশের। (Supreme Court)
শীর্ষ আদালতের প্রতীকী চিহ্ন এবং 'লেডি জাস্টিসে'র মূর্তি বদলের বিরোধিতা করে প্রস্তাব পাস করল সুপ্রিম কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের এগজিকিউটিভ কমিটি। অক্টোবর সর্বসম্মতিতে প্রস্তাব পাস হয়েছে। অভিযোগ, প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় কারও মতামত না নিয়ে এই পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বার অ্যাসোসিয়েশনের এগজিকিউটিভ কমিটির প্রেসিডেন্ট কপিল সিবল। (Supreme Court Bar Association)
সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন সিবল। তাঁর বক্তব্য, "একতরফা ভাবে কিছু মৌলবাদী পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে বলে নজরে এসেছে সুপ্রিম কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের এগজিকিউভ কমিটির। কারও সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করেই প্রতীকচিহ্ন, লেডি জাস্টিসের মূর্তি পাল্টে ফেলা হয়েছে। বিচারব্যবস্থায় আমাদের সকলের সমান যোগদান রয়েছে। কিন্তু এই পরিবর্তনের প্রস্তাব নিয়ে কিছু জানানোই হয়নি আমাদের। এই রদবদলের নেপথ্যে কী যুক্তি রয়েছে, তা বোধগম্য হচ্ছে না কারও।"
চলতি মাসের শুরুতে সুপ্রিম কোর্টের নয়া প্রতীক চিহ্নের উন্মোচন করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। নয়া দিল্লিতে ন্যাশনাল কনফারেন্স অফ ডিস্ট্রিক্ট জুডিশিয়ারির সমাবেশ চলাকালীন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের উপস্থিতিতে নয়া প্রতীক চিহ্নের উন্মোচন হয়। সুপ্রিম কোর্টের নতুন পতাকাটি গাঢ় নীল রংয়ের। পতাকার মাঝখানে রয়েছে অশোক চক্র রয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের গম্বুজ এবং দেশের সংবিধান। উপরের অংশে লেখা রয়েছে 'সুপ্রিম কোর্ট অফ ইন্ডিয়া', নীচের অংশে 'ইয়াকো ধর্মস্ততো জয়' অর্থাৎ যেখানে ধর্ম, সেখানেই বিজয়'। আগের প্রতীক চিহ্নে ছিল তুলাদণ্ড। নীচে লেখা ছিল, 'সত্যমেব জয়তে' অর্থাৎ সত্যের জয় হোক।
এর পর, সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নির্দেশে পাল্টে ফেলা হয় ন্যায় বিচারের প্রতীক 'লেডি জাস্টিসে'র মূর্তিটিও। গাউনের জায়গায় শাড়ি পরানো মূর্তি উন্মোচিত হয়। এযাবৎ মূর্তির চোখ বাঁধা থাকলেও, নয়া মূর্তির চোখ খোলা। আইনের চোখে সকলে সমান, আইন পক্ষপাতিত্ব করে না বোঝাতেই এতদিন মূর্তির চোখ বাঁধা ছিল। চোখ খোলা মূর্তির সপক্ষে যুক্তি উঠে আসে আদালত অন্ধ নয় বলে। আগে মূর্তি হাতে তলোয়ার ছিল, শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা বোঝাতো। নয়া মূর্তির হাতে রয়েছে সংবিধান। ডানহাতের তুলাদণ্ডটিই শুধু পাল্টানো হয়নি।
এই পরিবর্তন নিয়ে যে যুক্তি উঠে আসে, তা হল, ঔপনিবেশিক ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে যেমন ভারতীয় দণ্ডবিধির পরিবর্তে দেশে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা চালু হয়েছে, সেই রীতি বজায় রেখেই 'লেডি জাস্টিসে'র মূর্তিটি পাল্টানোর নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। একের পর এক ঘটানো হলেও, কারও মতামত নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছে বার অ্যাসোসিয়েশন। শুধু তাই নয়, সুপ্রিম কোর্টে জাজেস লাইব্রেরির জায়গায় মিউজিয়াম গড়ে তোলায় আপত্তি জানানো সত্ত্বেও নির্মাণকার্য শুরু হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ বার অ্যাসোসিয়েশনের। তাঁরা আইনজীবীদের জন্য ক্যাফে এবং লাইব্রেরির জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন, তাতে কর্ণপাত করা হয়নি বলে অভিযোগ।