নয়াদিল্লি: 'মিডিয়া ট্রায়াল' নিয়ে কড়া অবস্থান সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। আদালতের সাফ যুক্তি, কোনও মামলায় নাম উঠলেই, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অপরাধ প্রমাণিত হয় না। বরং সংবাদমাধ্যমের পক্ষপাতমূলক আচরণ জনমনে বিশেষ ধারণার জন্ম দেয় (Media Trials)। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সন্দেহে চোখে দেখতে শুরু করেন সকলে। তাই সংবাদমাধ্যমে পুলিশ এবং তদন্তকারীদের তরফে কী বিবৃতি যাচ্ছে,  এ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে নির্দেশিকা বেঁধে দেওয়ার নির্দেশ দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। তার জন্য তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে। (SC on Media Trials)


আদালত জানিয়েছে, তিন মাসের মধ্যে বিশদ নির্দেশিকা তৈরি করতে হবে। অপরাধমূলক মামলার ক্ষেত্রে সেই নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে পুলিশকে। সংবাদমাধ্যমে তারা কী বলবে, কী কী তথ্য প্রকাশ করতে পারবে, এ ব্যাপারে আগামী একমাসের মধ্যে সব রাজ্যের পুলিশের শীর্ষ আধিকারিক এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে সুপারিশও পাঠাতে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে। জানুয়ারি মাসে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলে বুধবার জানালেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। 


আরুষি হত্যাকাণ্ড মামলার প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে সংবাদমাধ্যমের পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ নিয়ে একটি মামলা দায়ের হয় আদালতে। সেই সময়ই কেন্দ্রকে বিশেষ নির্দেশিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সময় দেওয়া হয়েছিল ছয় সপ্তাহ। তার মধ্যে খসড়া নির্দেশিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়, যাতে অভিযুক্ত এবং অভিযোগকারী, কারও প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ না করা হয়, কারও অধিকার লঙ্ঘিত না হয়। কিন্তু এতদিনেও বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি বলে আদালতে জানান অভিযোগকারী।


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: দুবাই বিমানবন্দরে হঠাৎ সাক্ষাৎ মমতা-রনিলের! পেলেন আমন্ত্রণও


বুধবার সেই মামলার শুনানি চলছিল। সেখানেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিন আদালত বলে, "মিডিয়া ট্রায়াল বিচারব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করে। তদন্তের ঠিক কোমন পর্যায়ে তথ্য প্রকাশ করা যেতে পারে, তা ঠিক করতে হবে। অভিযুক্ত এবং অভিযোগকারী, দু'জনের জন্যই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের স্বার্থও জড়িয়ে রয়েছে। কারণ অপরাধ মামলায় জনসাধারণের স্বার্থও জড়িয়ে থাকে, সংবাদমাধ্যমের দ্বারা যা প্রভাবিত হয়।"


আদালত আরও বলেস, "কোনও খবর সম্প্রচার বা মতামত তুলে ধরার ক্ষেত্রে সঙ্গে বাক্ স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নও জড়িয়ে থাকে। তাই বলে মিডিয়া ট্রায়াল হতে দেওয়া যায় না। তথ্য জোগাড়ের অধিকার রয়েছে মানুষের। কিন্তু তদন্ত চলাকালীন, কোন সময়ে কোন তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে, তার দ্বারা তদন্তপ্রক্রিয়াও প্রভাবিত হতে পারে।"


আদালতের বক্তব্য, "তদন্ত চলাকালীন, অভিযুক্তেরও ন্যায্য এবং পক্ষপাতিত্বহীন আচরণ প্রাপ্য। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের সবরকম অধিকার রয়েছে তাঁর। কিন্তু কখনও কখনও সংবাদমাধ্যমের আচরণ অভিযুক্তের প্রতি ন্যায্য হয় না।" এ নিয়ে সরকারের তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্যা ভাটি  জানান, পুলিশ সংবাদমাধ্যম কখন, কী বলছে, তা নিয়ে নির্দেশিকা প্রকাশ করা হবে শীঘ্রই। তাতে আদালত জানায়, অভিযুক্ত এবং অভিযোগ কারী, দুই পক্ষেরই গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার রয়েছে। কোনও মতেই তার লঙ্ঘন চলে না। প্রয়োজনে পুলিশ এবং তদন্তকারীদের বিষয়টি নিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে বলেও মন্তব্য করে আদালত।