নয়াদিল্লি: গর্ভপাত সংক্রান্ত অতি স্পর্শকাতর মামলা। তা নিয়ে প্রায় ৪০ মিনিট রুদ্ধদ্বার বৈঠক হল সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court)। অন্তঃসত্ত্বা তরুণী অবিবাহিত। বাড়ির লোকজন কিছুই জানেন না। তাই গোপনীয়তার আবেদন জানিয়েছিলেন ওই তরুণী। তাঁর সেই আবেদনে সাড়া দিয়েই গোপনীয়তা নিশ্চিত করল শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের (CJI DY Chandrachud) কক্ষে গোপন বৈঠকে গৃহীত হল সিদ্ধান্ত।


গোপনীয়তার আবেদন জানিয়েছিলেন ওই তরুণী, সাড়া দিল আদালত


বৃহস্পতিবার সকালে এই বেনজির ঘটনা ঘটল সুপ্রিম কোর্টে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া, ২০ বছর বয়সি এক অন্তঃসত্ত্বা তরুণী আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। গর্ভাবস্থায় ২৯ সপ্তাহ কেটে গিয়েছে তাঁর। কিন্তু গর্ভপাত করাতে চাইছিলেন ওই তরুণী। কিন্তু এই অবস্থায় গর্ভপাত করানো নিরাপদ বলে জানিয়ে দেন অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর চিকিৎসকদের বোর্ড। এমনকি ভ্রূণটি জীবিত থাকতে পারে বলে জানানো হয়।


তাতেই আদালতের কাছে আবেদন জানান ওই তরুণী। জানান, তাঁর পরিবার এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। তিনি নিজেও কিছু প্রকাশ করতে চান না। গোটা বিষয়টি গোপনে মিটিয়ে নিচে চান। সেই অনুয়ায়ীই, এ দিন মামলা নিয়ে প্রধানবিচারপতির কক্ষে আলাদা করে আলোচনা শুরু হয়। শেষ মেশ গর্ভে থাকা সন্তানের ভাল-মন্দ বিচার করে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।


প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বে এ দিন বিচারপতি পিএস নরসিংহ রাও এবং জেবি পর্দিওয়ালা মামলার শুনানি করছিলেন। শুনানির মাঝেই সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এবং অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্যা ভাটিকে নিজের কক্ষে উপযেতে বলেন প্রধান বিচারপতি। তার পর টানা ৪০ মিনিট প্রধান বিচারপতির কক্ষেই চলে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক।


আরও পড়ুন: Adani Group Crisis: আদানি গোষ্ঠীকে নিয়ে সংসদে চাপের মুখে কেন্দ্র, বিরোধীদের বৈঠকে গেল না তৃণমূল, উঠছে প্রশ্ন


আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, সলিসিটর জেনারেল মেহতা এ দিন জানান, তিনি একসময় সন্তান দত্তক নিতে চেয়েছিলেন। রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ানো অনাথ শিশুরা সামাজিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। ওই তরুণী সন্তানের জন্ম দিলে, নিঃসন্তান এক দম্পতি শিশুর দায়িত্ব নিতেও তৈরি বলেও প্রধান বিচারপতিকে জানান তিনি। গোটা প্রক্রিয়াই গোপন রাখা হবে বলে জানান।


প্রধান বিচারপতির নিজে দুই ভিন্ন ভাবে সক্ষম মেয়ে দত্তক নিয়েছেন। বিষয়টির স্পর্শকাতরতা তিনি অনুভব করেন বলে খবর মিলেছে আদালত সূত্রে। বাড়িতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্যাও জন্মের পর শিশুটির দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।


সংবিধানে সংরক্ষিত অনুচ্ছেদ ১৪২-এর প্রয়োগ করে শীর্ষ আদালত


এর পর, সংবিধানে সংরক্ষিত অনুচ্ছেদ ১৪২-এর প্রয়োগ করে শীর্ষ আদালত। এর আওতায় ন্যায় বিচারের জন্য শীর্ষ আদালতের হাতে বিশেষ ক্ষমতা অর্পণ করা হয়ে থাকে। সেই অনুচ্ছেদ ব্যবহার করই এ দিন সরকার এবং এমস কর্তৃপক্ষের কাঁধে বিশেষ দায়িত্ব তুলে দেয় আদালত। অন্তঃসত্ত্বা তরুণী যাতে নিরাপদে সন্তান প্রসব করতে পারেন, স্বাস্থ্য এবং সব ধরনের সরকারি সুবিধা যাতে তিনি পান, তা সুনিশ্চিত করতে বলা হয়। ওই তরুণীকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় এমস কর্তৃপক্ষকেও। শিশুর জন্ম হলে, আইনি প্রক্রিয়া মেনে ইচ্ছুক দম্পতিকে এগোতে হবে বলেও জানায় আদালত। অন্তঃসত্ত্বা তরুণী তাতে রাজি হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।