নয়াদিল্লি: প্রয়োজনীয় অনুষ্ঠান করে নিয়ম-নীতি মেনে না হলে হিন্দু বিবাহ (Hindu Marriage) বৈধ নয়। সম্প্রতি বিবাহ-বিচ্ছেদ সংক্রান্ত একটি মামলার রায় দিতে গিয়ে একথা জানাল দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)।


এপ্রসঙ্গে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ হল, হিন্দু বিবাহ কোনও নাচ বা গানের অনুষ্ঠান নয়। অথবা এটি বাণিজ্যিক লেনদেনের কোনও অনুষ্ঠান নয়। হিন্দু বিবাহ আইন মেনে যদি বিবাহের অনুষ্ঠান সম্পন্ন না হয় তাহলে এই বিয়েকে বৈধ বলে গণ্য করা যাবে না।


সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভি নাগারথনা ও অগাস্টিন জর্জ মাসিহের ডিভিশন বেঞ্চ এই সংক্রান্ত একটি মামলার রায় দিতে গিয়ে জানান, হিন্দু বিবাহ হল একটি সংস্কার ও ধর্মানুষ্ঠান যা ভারতীয় সমাজে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হয়। যা নিয়ম-নীতি মেনে না হলে তাকে বৈধ বলা যাবে না। কারণ হিন্দু সমাজে নিয়ম-নীতি মেনে বিয়েকে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে মান্যতা দেওয়া হয়ে থাকে।


সম্প্রতি দু-জন প্রশিক্ষিত বাণিজ্যিক পাইলট যুবক-যুবতী বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভি নাগারথনা ও অগাস্টিন জর্জ মাসিহের ডিভিশন বেঞ্চে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। তাঁরা হিন্দু বিবাহ আইনের অধীনে বৈধ নিয়ম-নীতি না মেনেই বিবাহ করেছিলেন বলেও আবেদনে উল্লেখ করেছিলেন। এই মামলায় উভয়পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শোনার পর আদালত পরিষ্কার জানিয়ে দেয় যে হিন্দু বিবাহ আইন অনুযায়ী বিবাহের অনুষ্ঠান না করলে তাকে কখনই বৈধ বলে মানা হবে না। পাশাপাশি বিবাব-বিচ্ছেদের আবেদনকারীদের কাছে আদালত আবেদন করে বিবাহের প্রাতিষ্ঠানিক গুরুত্বের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়ার পরেই তাঁদের বিবাহ করা উচিত ছিল। তা না করেই শুধুমাত্র নাচ-গান ও মদ্যপানের সঙ্গে নিমন্ত্রিতদের খাওয়াদাওয়া করালেই তাকে হিন্দু বিবাহ আইন অনুযায়ী বৈধ বলে মানা যায় না। কারণ হিন্দু বিবাহ মানে অযথা চাপ দিয়ে যৌতুক ও উপহার বিনিময়ের একটা উপলক্ষ নয় যার ফলে পরবর্তী কালে ফৌজদারি মামলার সূচনা হতে পারে। সেই সঙ্গে এটি কোনও বাণিজ্যিক লেনদেনও নয়। হিন্দু বিবাহ আইন অনুযায়ী, এই একটি এমন পবিত্র অনুষ্ঠান যার মাধ্যমে একজন পুরুষ ও মহিলা নিজেদের মধ্যে একটি সম্পর্ক স্থাপন করেন যার দ্বারা তাঁরা ভবিষ্যতে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একসঙ্গে জীবন অতিবাহিত করে। এই বিষয়টি ভারতীয় সমাজের একটি মৌলিক একক হিসেবে পরিগণিত হয়।


হিন্দু আইনে বিবাহকে পবিত্র বলে অভিহিত করা হয় কারণ এটি একটি আজীবন সম্মতিমূলক সম্পর্ক। হিন্দু বিবাহ বংশবৃদ্ধিকে সহজ করে, পরিবারের ঐক্য সুসংহত করে এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে দৃঢ় করে।


হিন্দু আইনে বিবাহ হল একটি ধর্মানুষ্ঠান বা একটি সংস্কার। যা একটি নতুন পরিবারের ভিত্তি স্থাপন করে। ডিভিশন বেঞ্চ আরও উল্লেখ করে জানান, বিবাহের মতো এমন কোনও পবিত্র অনুষ্ঠান নেই যেখানে স্বামী ও স্ত্রীর অধিকার সমান। লক্ষ্য করা গেছে যে শতাব্দীর পর শতাব্দী এবং আইনটি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি মাত্র বিবাহ স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের একমাত্র আইনিভাবে অনুমোদিত রূপ।


ডিভিশন বেঞ্চ তার ১৯ এপ্রিলের আদেশে বলেছিল, যেখানে হিন্দু বিবাহ প্রযোজ্য আচার বা অনুষ্ঠান যেমন 'সপ্তপদী'(পবিত্র অগ্নিকাণ্ডের আগে বর এবং কনের দ্বারা যৌথভাবে সাতটি পদক্ষেপ নেওয়া) অনুসারে সম্পাদিত হয় না, সেখানে বিয়ে হবে না।


বিচারপতিরা বলেন "আমরা আরও লক্ষ্য করেছি যে হিন্দু বিবাহ একটি ধর্মানুষ্ঠান এবং এর একটি পবিত্র চরিত্র রয়েছে৷ একটি হিন্দু বিবাহে সপ্তপদী প্রসঙ্গে, ঋগ্বেদ অনুসারে, সপ্তম ধাপ (সপ্তপদী) শেষ করার পর বর কনেকে বলে,'সাতটি পাকে সঙ্গে সঙ্গে আমরা বন্ধু হয়েছি। আমি যেন তোমার বন্ধুত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন না হই।


ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে যে আইনটি ১৮ মে, ১৯৫৫ সালে কার্যকর হওয়ার পরে, এটি হিন্দুদের মধ্যে বিবাহ সম্পর্কিত আইনকে সংহিতাবদ্ধ করেছে এবং এটি কেবল হিন্দুদেরই নয়,লিঙ্গায়ত, ব্রাহ্মস, আর্যসমাজভুক্ত, বৌদ্ধ, জৈন এবং শিখদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।  


যদি কেউ এই ধরনের অনুষ্ঠানের মধ্যে গিয়ে দিয়ে না থাকে, তাহলে হিন্দু বিবাহ আইনের ৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনও হিন্দু বিবাহ হবে না এবং প্রয়োজনীয় অনুষ্ঠানগুলি সম্পন্ন না হওয়ার ক্ষেত্রে একটি সত্তার দ্বারা শুধুমাত্র একটি শংসাপত্র ইস্যু করা, কোনটি নিশ্চিত করবে না। 


শীর্ষ আদালত আরও উল্লেখ করেছে যে বিবাহ নথিভুক্তকরণের সুবিধা হল যে এটি একটি বিতর্কিত মামলায় বিবাহের সত্যতা প্রমাণের সুবিধা দেয়। তবে যদি হিন্দু বিবাহ আইনের ৭ নম্বর ধারা অনুসারে কোনও বিবাহ না হয়ে থাকে তাহলে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন বিবাহটিকে বৈধতা দেবে না। "


এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিশেষ বিবাহ আইন, ১৯৫৪-এর অধীনে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা উল্লিখিত আইনের বিধান অনুযায়ী স্বামী ও স্ত্রী হওয়ার মর্যাদা অর্জন করতে পারেন। তবে "বিশেষ বিবাহ আইন, ১৯৫৪ কেবল হিন্দুদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়৷ যে কোনও পুরুষ এবং মহিলা তাঁদের জাতি, বর্ণ বা ধর্ম নির্বিশেষে বিশেষ বিবাহ আইন, ১৯৫৪-এর আইনের অধীনে স্বামী এবং স্ত্রী হওয়ার মর্যাদা অর্জন করতে পারে। তবে বিধানগুলির অধীনে আইনের (হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫), উল্লিখিত আইনের ধারা ৫ এর অধীনে নির্ধারিত শর্তগুলিই মেনে চলা উচিত নয় তবে দম্পতিদের অবশ্যই আইনের ৭ নম্বর ধারা অনুসারে বিবাহের অনুষ্ঠান করতে হবে।


সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪২ ধারার অধীনে তার পূর্ণ ক্ষমতা প্রয়োগ করে শীর্ষ আদালত ঘোষণা করেছে যে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আবেদন জানানো দম্পতি আইন অনুসারে বিবাহিত নয় এবং হিন্দু বিবাহ আইনের অধীনে বৈধ অনুষ্ঠানের অনুপস্থিতিতে তাদের দাখিল করা বিবাহের শংসাপত্রটি বাতিল এবং অকার্যকর হিসেবে ধরা হবে। তাই আদালত তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া এবং স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা যৌতুকের মামলাও বাতিল করেছে।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


আরও পড়ুন: GST Revenue Collection: একমাসে ২.১০ লক্ষ কোটির মাইলফলক পার, GST বাবদ আয়ে সর্বকালীন রেকর্ড কেন্দ্রের