নয়াদিল্লি: নির্বাচনী মরসুম হলে তো কথাই নেই। তার বাইরেও ঘৃণাভাষণের ফোয়ারা ছোটে বছরভর। সেই নিয়ে এ বার মুখ খুলল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের মতে, যেই মুহূর্তে দেশে রাজনীতি আর ধর্মের মধ্যে লক্ষ্মণরেখা টানা সম্ভব হবে, যেই মুহূর্তে রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ করবেন রাজনীতিকরা, ঘৃণাভাষণের রীতি সেই দিন সমাপ্ত হবে।


অহরহ রাজনীতিকরা ঘৃণাভাষণ দিয়ে চললেও, মহারাষ্ট্রের মতো একাধিক রাজ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপই করা হয় না বলে আদালত অবমাননার একটি মামলার শুনানি চলছিল বুধবার। তার শুনানিতেই এ দিন ঘৃণাভাষণ নিয়ে অবস্থান জানায় বিচারপতি কেএম জোসেফ এবং বিভি নাগরত্নের ডিভিশন বেঞ্চ। 


এ দিন ঘৃণাভাষণকে একটি দুষ্ট চক্র বলেও উল্লেখ করে শীর্ষ আদালত। এই প্রসঙ্গে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং অটলবিহারি বাজপেয়ীর উদাহরণ টানা হয়। আদালত জানায়, দূর-দূরান্ত থেকে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নেহরু এবং বাজপেয়ীর ভাষণ শুনতে জড়ো হতেন মানুষজন। বিচারপতি নাগরত্ন বলে, "দেশ কোন পথে এগোচ্ছে চোখ খুলে দেখা উচিত আমাদের। জওহরলাল নেহরু, অটলবিহারি বাজপেয়ীর মতো বক্তা ছিলেন। মধ্যরাতের ভাষণ ছিল। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে, দূর-দূরান্ত থেকে তাঁদের কথা শুনতে আসতেন মানুষ। এখন সবদিক থেকে উড়ো মন্তব্য ছুটে আসছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার আবেদন পাচ্ছি আমরা।"


বিচারপতি জোসেফ বলেন, "রাজনীতিকরা যখন রাজনীতিতে ধর্মকে টেনে আনেন, তখনই সমস্যার সৃষ্টি হয়। যে মুহূর্তে রাজনীতি এবং ধর্মকে আলাদা করে ফেলা সম্ভব হবে, এই সমস্যার সমাপ্তি ঘটবে। আগেও বলেছি, গণতন্ত্রের পক্ষে রাজনীতি এবং ধর্মের সংমিশ্রণ অত্যন্ত বিপজ্জনক।"


দেশের সাধারণ মানুষের পক্ষে যে প্রত্যেক বার ঘৃণাভাষণ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া সম্ভব নয়, তা এ দিন মেনে নেয় শীর্ষ আদালত। তাই আদালতের পরামর্শ, এ ব্যাপারে মানুষকেই সচেতন হতে হবে। অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ, সহ-নাগরিককের দুর্নাম করা এড়িয়ে চলতে হবে। টেলিভিশন চ্যানেলে, প্রকাশ্য মঞ্চে এই ধরনের আচরণ বরদাস্ত করা উচিত নয় বলে জানায় আদালত।


আদালতে শুনানি চলাকালীন উপস্থিত ছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। আবেদনকারী শাহিন আবদুল্লার অভিসন্ধি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বেছে বেছে কিছু ঘটনাই তিনি তুলে ধরেছেন বলে মন্তব্য করেন। তাতে বিচারপতিদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় সলিসিটর জেনারেলের। সংবিধান মেনেই প্রত্যেক মামলা দেখা হয় বলে জানায় আদালত। 


ঘৃণাভাষণ নিয়ে প্রশাসনের ভূমিকাতেও প্রশ্ন তোলে আদালত। বলা হয়, "আদালত অবমাননার মামলার শুনানি করতে হচ্ছে, কারণ রাজ্যগুলি সময়ে পদক্ষেপ করছে না। আজ এই পরিস্থিতি কারণ, প্রশাসন অক্ষম, দুর্বল এবং সময়ে পদক্ষেপ করে না। প্রশাসন যদি মৌনই থাকে, তাহলে তার থাকার দরকার কী?"


এতে সলিসিটর জেনারেল জানান, রাজ্যগুলির কথা আলাদা, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার মোটেই তেমন আচরণ করে না। পিএফআই-এর মতো সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেরলকেও ঘৃণাভাষণের মামলায় নোটিস দিক আদালত। তাতে আরও ক্ষুব্ধ হন বিচারপতিরা। আদালতে আইনি প্রক্রিয়া চলাকালীন, এই ধরনের নাটক কাম্য় নয় বলে মন্তব্য করে আদালত।