নয়াদিল্লি: 'বুলডোজার শাসন' নিয়ে কড়া অবস্থান সুপ্রিম কোর্টের। শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিল, পুলিশ-প্রশাসন বিচারব্যবস্থার ঊর্ধ্বে নয়। বিচারের আগেই অভিযুক্তকে দোষী গন্য করে দেওয়া যায় না। ইচ্ছে মতো যেখানে সেখানে যাতে বুলডোজার না চলে, তার জন্য নির্দেশিকা জারি করেছে আদালত। (Supreme Court on Bulldozer Justice)
অপরাধ মামলায় নাম থাকা ব্যক্তিদের বাড়িতে বুলডোজার চালানোর বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক পিটিশন জমা পড়েছিল। বিচার বহির্ভূত ভাবে 'বুলডোজার শাসন'-এর বিহিত চেয়েছিলেন আবেদনকারীরা। বুধবার বিচারপতি বিআর গাভাই এবং কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চে সেগুলির শুনানি হয়। আর সেখানেই কড়া অবস্থান নেয় আদালত। (Supreme Court of India)
শুনানি চলাকালীন এদিন বিচারপতি গাভাই জানান, মাথার উপর ছাদ গড়ে তোলা প্রত্যেক পরিবারের স্বপ্ন। পুলিশ-প্রশাসনের কারও আশ্রয় কেড়ে নেওয়ার অধিকার রয়েছে কি না, এখানে প্রশ্ন সেটাই। বিচারপতি গাভাই বলেন, "গণতান্ত্রিক সরকারের ভিত্তিই হল আইনের শাসন। আর আইন বলে, আগেভাগে অভিযুক্তকে দোষী বলা যায় না। সরকারের স্বৈরাচারী পদক্ষেপ থেকে রক্ষা করতে সংবিধান নাগরিকদের কিছু অধিকার দিয়েছে। আইনের শাসন বলে, স্বেচ্ছাচার করে কারও সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া যায় না।"
বিচারপতি গাভাই আরও বলেন, "পুলিশ-প্রশাসন কখনও বিচারব্যবস্থার বিকল্প হতে পারে না। জনগণের আস্থা ধরে রাখা, তাঁদের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রশ্ন জড়িয়ে এখানে। কেউ অভিযুক্ত বলেই পুলিশ-প্রশাসন যদি তাঁর বাড়িতে বুলডোজার চালায়, সেক্ষেত্রে ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতি লঙ্ঘন করা হয়।"
যে আধিকারিক বুলডোজার চালানোর নির্দেশ দেবেন, তাঁর উপর এক্ষেত্রে দায় বর্তাবে বলে মন্তব্য করেছে আদালত। আদালতের বক্তব্য, "সরকার এবং আধিকারিকরা স্বৈরাচারী এবং অতিসক্রিয় পদক্ষেপ করতে পারেন না। কোনও আধিকারিক ক্ষমতার অপব্যবহার করলে স্বৈরাচারী আচরণ করলে, তাঁকে রেয়াত করা হবে না।"
আদালত জানিয়েছে, আশেপাশের সবকিছু ছেড়ে যখন একটি নির্মাণকে চিহ্নিত করে বুলডোজার চালানো হয়, একই ধরনের অন্য কোনও নির্মাণকে স্পর্শ করা হয় না, সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে, বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দেওয়াল আসল লক্ষ্য নয়, বরং বিচার ছাড়াই শাস্তি দেওয়াই আসল লক্ষ্য। পরিবারের একজন যদি অভিযুক্ত হন, সেক্ষেত্রে বাকিদের মাথার উপর থেকে ছাদ কেড়ে নেওয়ার অধিকারই বা কে দিয়েছে, প্রশ্ন করে আদালত।
বেআইনি নির্মাণের উপর বুলডোজার টালানোর ক্ষেত্রে নিয়মও বেঁধে দিয়েছে আদালত। বলা হয়েছে, শোকজ নোটিস ছাড়া কোনও রকম বুলডোজার চালানো যাবে না। যাঁকে নোটিস দেওয়া হচ্ছে, ১৫ দিনের মধ্যে উত্তর দিতে হবে তাঁকে। স্থানীয় নিয়ম-কানুন অনুযায়ী সময় বর্ধিতও হতে পারে। শুধু শোকজ ধরালেই হবে না, কেন ওই নির্মাণকে বেআইনি বলা হচ্ছে, কী কী আইন লঙ্ঘিত হয়েছে, তা বিশদে জানাতে হবে নোটিসে। যাঁকে নোটিস দেওয়া হচ্ছে, তাঁর বক্তব্য শুনতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকে, সেই মতো এগোতে হবে। নির্মাণ বেআইনি হলে ১৫ দিন সময় দিতে হবে। কোথাও থেকে ওজর-আপত্তি না এলে, আদালত যদি স্থগিতাদেশ না দেয়, একমাত্র সেক্ষেত্রেই বুলডোজার চালানো যাবে।
আদালতের নির্দেশ অমান্য করলে, তা আদালত অবমাননা হিসেবে ধরা হবে বলেও জানানো হয়েছে। যাঁর নির্দেশে বুলডোজার চালানো হবে, নির্মাণকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়ও তাঁর কাঁধে বর্তাবে। টাকা কাটা হবে তাঁর বেতন থেকে। তাঁর বেতন থেকে টাকা আদায় করা হবে। বেআইনি নির্মাণ নিয়ে পাঠানো শোকজ নোটিস, সেই সংক্রান্ত চূড়ান্ত রায় যাতে সকলের চোখের সামনে থাকে, তার জন্য পুরসভাগুলিকে তিন মাসের মধ্যে পোর্টাল তৈরির নির্দেশও দিয়েছে আদালত।