পূর্ব মেদিনীপুর, বিটন চক্রবর্তী, হিন্দোল দে ও রঞ্জিত হালদার: দল বদলে এখন গেরুয়া শিবিরে শুভেন্দু অধিকারী। নতুন দলে যোগ দিয়েই পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে তৃণমূলকে নিশানা করেছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। তিনবার ‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও’ স্লোগান দিয়েছেন অমিত শাহের মঞ্চে। তার পাশাপাশি এক খোলা চিঠিতে শুভেন্দু দাবি করেছেন, যে ‘নিষ্কাম কর্মযোগীরা’ দল তৈরি করেছিল, তাদের জায়গায় আজ ‘সকাম কর্মভোগী’তে দল ভরে গেছে। আমাদের মতো সদস্য যাঁরা ‘ত্যাগ’-এ বিশ্বাস করে, তাঁদের সরিয়ে দলের দায়িত্বে এখন তাঁদের হাতে, যাঁরা ‘ভোগ’-এ বিশ্বাস করেন। যে সাধারণ মানুষ দলকে (তৃণমূল) ক্ষমতা দিয়েছিল, তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের সার্বিক উন্নয়নের পরিবর্তে এখন কিছু ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের উন্নয়নই একমাত্র এজেন্ডা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা আমাদের মহান রাজ্যকে জমিদারিতে পরিণত করার চেষ্টা করছেন। সময় এসে গেছে, যখন আমাদের ফের একবার আদর্শের জন্য লড়তে হবে।
আর শুভেন্দুর মুখে নাম না করে পরিবারতন্ত্র কিংবা ত্যাগ-ভোগ নিয়ে খোঁচা শোনা মাত্রই পাল্টা জবাব দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। বলেছেন, উনি তো অধিকারী পরিবারের পরিবারতন্ত্র নিয়ে কিছু বললেন না। কী নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন সেটা বলুন! আর ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকে ভোগ করার পর এখন মনে পড়ল, এমন বিদ্রূপাত্মক মন্তব্য করেছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারী কাঁথির তৃণমূল সাংসদ তথা পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা তৃণমূল সভাপতি। শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দু তমলুকের তৃণমূল সাংসদ। শুভেন্দু নিজে নন্দীগ্রামের বিধায়ক। শুভেন্দুর আরও এক ভাই সৌম্যেন্দু কাঁথি পুরসভার প্রশাসক।
এখন প্রশ্ন হল, শুভেন্দু তৃণমূল ছাড়ার পর এখনও অবধি তৃণমূলে থাকা শিশির, দিব্যেন্দু, সৌমেন্দু কী করবেন? অধিকারী পরিবারের বাকি তিন জনপ্রতিনিধি কি তৃণমূলেই থাকবেন? শুভেন্দুর পথ ধরে বিজেপিতে যোগ দেবেন? না কি কিছুদিন অপেক্ষা করে বিধানসভো ভোটের মুখে দলবদল করবেন? শুভেন্দু তৃণমূলের জন্মলগ্নের কথা মনে করানোয় তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আপনি প্রথম দিন থেকে তৃণমূলে ছিলেন না। শিশির অধিকারী কিছু বললে শুনব, আপনি নন।
শুভেন্দুর বাবা-ভাইরা কী করবেন, সেটা যেমন বড় প্রশ্ন, তেমনই শনিবার সকাল থেকে সবাই এটা জানতে কৌতুহলী ছিল যে, শুভেন্দুর সঙ্গে তাঁর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর ও পাশের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের কতজন তৃণমূল বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দেন।
পূর্ব মেদিনীপুরে মোট বিধানসভা আসন ১৬টি। ২০১৬ সালে তৃণমূল ১৩টি আসনে জয়ী হয়। একজন বিধায়কের মৃত্যুর পর বর্তমানে পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের ১২জন বিধায়ক রয়েছেন। শুভেন্দুর সঙ্গে শনিবার বিজেপিতে যোগ দিলেন একজন মাত্র তৃণমূল বিধায়ক। তিনি কাঁথি উত্তরের বিধায়ক বনশ্রী মাইতি। অর্থাৎ‍ শুভেন্দু, বনশ্রী চলে যাওয়ার পর পূর্ব মেদিনীপুরে আপাতত তৃণমূলের বিধায়ক রইল ১০ জন। পশ্চিম মেদিনীপুরের কোনও তৃণমূল বিধায়ক শনিবার বিজেপিতে যোগ দেননি। তবে বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন!
এদিকে তাঁর যোগদানের পর জেলার আদি বিজেপির মধ্যে যাতে কোনও ধরণের অসন্তোষ তৈরি না হয়, সেজন্য কৌশলী বার্তা দিয়ে শুভেন্দু বলেছেন, ভাববেন না শুভেন্দু খবরদারি করতে এসেছে। আমি কর্মী হিসাবে এসেছি। পতাকা লাগাতে বললে তাই করব। কর্মী হিসাবে কাজ করব।
পূর্ব মেদিনীপুরে বামেদের ৩জন বিধায়ক ছিল। তার মধ্যে হলদিয়ার সিপিএম বিধায়ক তাপসী মণ্ডল এবং তমলুকের সিপিআই বিধায়ক অশোক দিন্দা এদিন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।
পরবর্তীকালে দুই মেদিনীপুরে শুভেন্দু তৃণমূলে ভাঙন ধরাতে পারেন কি না, সেদিকেও নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।