কাবুল: আফগানিস্তানের তালিবান শাসক আপাতত নগদ-সঙ্কটে। ফলে তালিবান শাসকগোষ্ঠী সেখানকার দুঃস্থ কৃষকদের জমি ও ফসের ওপর তথাকথিত দান বা 'জাকাত' কর বসিয়েছে। তাদের কথায় ইসলামিক আইন অনুযায়ী এই করদান বাধ্যতামূলক।
যুদ্ধ, খরা ও করোনা অতিমারীর কবলে বিপর্যস্ত আফিগানিস্তানের কৃষকেরা। গত এক বছরে এই সমস্ত চাষিরা প্রচুর অর্থ খুইয়েছেন কেবলমাত্র ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে। সূত্রের খবর, এবার তালিবানদের করদানের হুকুম তাদের বড় সমস্যার মুখে ফেলেছে।
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (World Food Program)-এর সমীক্ষা অনুযায়ী ১৪ মিলিয়ন আফগান যাঁরা খাদ্যসঙ্কটে ভুগছেন তাঁদের মধ্যে এই কৃষকেরা অন্যতম। তা সত্ত্বেও এই কর 'চ্যারিটি'-এর নামে জোর করে আদায় করা হচ্ছে।
তালিবান কর আদায়কারীরা কোনও কৃষকের সম্পত্তির যা মূল্য নির্ধারণ করছে তার ২.৫ শতাংশ কর হিসেবে দিতে হচ্ছে, জানাচ্ছেন সেখানকার কৃষকেরা।
তালিবান শাসকদল অবশ্য এই করকে ইসলামের ৫ স্তম্ভের অন্যতম বলে চিহ্নিত করেছে, যা ইসলাম ধর্মাবলম্বী প্রত্যেকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
এক সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, 'জাকাত' স্বেচ্ছায় মহানুভব হয়ে কাউকে উপহার দেওয়া বোঝায় না। যাঁরা নির্দিষ্ট সীমার ওপরে উপার্জন করেন তাঁদের জন্য এই কর বাধ্যতামূলক হওয়ার কথা। এই কর কোনও মানুষের আয় ও তাঁর সম্পত্তির মূল্যের ওপর নির্ভর করে।
সাধারণত গরিব, বা যাঁদের টাকার প্রয়োজন, যাঁরা দাস বা ঋণে ডুবে আছেন, বা ভবঘুরে, অথবা যেসব সৈনিক মুসলিম সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে লড়াই করেন তাঁদের এই 'জাকাত' পাওয়ার কথা। যারা এই 'জাকাত' কর সংগ্রহ করে, তারাও কাজের জন্য এর থেকে খানিক কমিশন পায়।
যদিও বিভিন্ন ইসলামিক স্কলার ও সমাজসেবকের কথায় এই কর মুসলিম জগতের দারিদ্র দূর করতে সক্ষম হয়নি। তাঁদের মতে সমস্ত ফান্ড অপচয় করা হয়েছে এবং ঠিকমতো কাজে লাগানো হয়নি।
প্রশাসনের তরফে জানানো হয় যে তালিবান সরকার কোনও কর আদায়ের বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি। তবে ঘোর অঞ্চলের বাসিন্দারা সেই দাবি খণ্ডন করেছেন। মধ্য আফগানিস্তানের বাসিন্দারাও জানিয়েছেন, বন্দুকধারী তালিবানেরা তাঁদের বাড়িতে কর আদায় করতে রাতের অন্ধকারেও হানা দেয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যাঁরা এই কর দিতে পারেননি, তাঁদের গবাদীপশু পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এর ফলে সেই সকল পরিবারের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।
তালিবান শাষিত কাবুল সরকারের কৃষি মন্ত্রকের কথায়, কৃষক, পশুপালক ও ছোট বাগান সম্পন্ন মানুষদের থেকে এটি দান হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে। এর ফলে রাজস্ব ভাণ্ডার আরও শক্তিশালী হবে এবং দেশ আরও 'স্বয়ংসম্পূর্ণ' হবে।