নয়াদিল্লি: ভোটারতালিকায় বিশেষ সংশোধন ঘটানো ঘিরে উত্তাল গোটা দেশ। সেই নিয়ে পারদ চড়ছে নির্বাচনমুখী বিহারেও। আর সেই আবহেই নির্বাচন বয়কটের জল্পনা উস্কে দিলেন লালুপ্রসাদ যাদবের ছেলে, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তথা রাজ্য বিধানসভার বিরোদী দলনেতা তেজস্বী যাদব। এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না, জোটসঙ্গী এবং মানুষের মতামতকে সামনে রেখে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন তেজস্বী। (Bihar Voter List Row)

বিহারের ভোটারতালিকা থেকে প্রায় ৬১ লক্ষ নাম বাদ পড়তে চলেছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ৯৯ শতাংশ ভোটারের কাছে পৌঁছতে পেরেছে তারা। ৭.৯ কোটি ভোটারের মধ্যে ৭.২১ লক্ষ আবেদনপত্র জমা পড়েছে এবং তার ডিজিটালকরণও সম্পন্ন হয়েছে। ৭ লক্ষ মানুষ এখনও ফর্ম জমা দেননি। যে ৬১.১ লক্ষ ভোটারের নাম পড়তে পারে বলে জানা যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে ২১.৬ লক্ষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন। ৩১.৫ লক্ষ পাকাপাকি ভাবে বিহারের বাইরে চলে গিয়েছেন। ৭ লক্ষের নাম রয়েছে একাধিক জায়গায়। ১ লক্ষের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। (Bihar Assembly Elections 2025)

বিহারের মোট ২৪৩টি বিধানসভা ক্ষেত্রের প্রত্যেকটি থেকে ২৫ হাজার ১৪৪ জন ভোটারের নাম বাদ পড়তে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু যে পদ্ধতিতে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে গোড়া থেকেই আপত্তি তুলছেন বিরোধীরা। বেছে বেছে নিম্নবিত্ত, বিরোধী শিবিরের ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁদের। আর সেই আবহেই সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছেন তেজস্বী। তাঁর বক্তব্য, “আমরা এটা (নির্বাচন বয়কট) নিয়ে আলোচনা করতে পারি। দেখতে হবে মানুষ কী চান। ভোটারতালিকা থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের নাম কেটে দিতে হবে বলে যখন ঠিক হয়েই গিয়েছে, নির্বাচনের প্রয়োজন কী? আমরা বয়কটের কথা ভাবব।”

নির্বাচন কমিশন আসলে বিজেপি-কে নির্বাচনে জেতানোর দায়িত্ব পালন করছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। তেজস্বীও সেদিকেই ইঙ্গিত করেন। বলেন, “সব তো ঠিক হয়েই গিয়েছে! প্রকাশ্যে বেইমানি করছেন। লক্ষ লক্ষ মানুষের নাম কেটে দিচ্ছে। কিন্তু এই লক্ষ লক্ষ মানুষই যখন মোদিজিকে ভোট দিলেন, সরকার নির্বাচন করলেন, তখন সব ঠিক ছিল আমরা নির্বাচন বয়কট নিয়ে ভাবনাচিন্তা করব।”

চলতি বছরের শেষ দিকে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। এখনও পর্যন্ত একবারও নিজের ক্ষমতায় সেখানে সরকার গড়তে পারেনি বিজেপি। তাই নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে ভোটারতালিকায় রদবদল ঘটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। ভোটার তালিকায় হেরফের ঘটানোর ১০০ শতাংশ প্রমাণ তাঁর হাতে রয়েছে বলে দাবি করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীও। তার মধ্যেই নির্বাচন বয়কটের কথা শোনা গেল তেজস্বী। এর পাল্টা বিজেপি সাংসদ রাজীব প্রতাপ রুডি বলেন, “হয়ত বুঝে গিয়েছেন হারবে। তাই আগেই মাঠ ছাড়ছেন। নইলে কোনও বড় রাজনৈতিক খেলার পরিকল্পনা চলছে।” কিন্তু বিজেপি-র অস্বস্তী বাড়িয়েছেন জোটসঙ্গী নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দলের সাংসদ গিরিধারী যাদব। তাঁর বক্তব্য, “নির্বাচন কমিশনের কোনও বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই। বিহারের ইতিহাস, ভূগোল কিছু জানে না। বর্ষার সময় চাষবাসের কাজ চলছে। কী করে কাগজপত্র জমা দেবে? আমারই কাগজ জমা দিতে ১০ দিন লেগে গিয়েছে। ছেলে আমেরিকায় থাকে। কী করে একমাসের মধ্যে সই করবে। জোর জবরদস্তি চাপিয়ে দিচ্ছে। একেবারে তুঘলকি ফরমান।”

ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে এই মুহূর্তে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিহারে। বৃহস্পতিবারই পটনায় কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের বিক্ষোভ ঘিরে ধুন্ধুমার বাঁধে। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। জলকামান দাগা হয় বিক্ষুব্ধদের দিকে।